দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মহাযজ্ঞে পূর্ণাহুতি মুখ্যমন্ত্রীর, জানালেন বুধবারের অনুষ্ঠানসূচী

15

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ এপ্রিল: আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, তারপরই দিঘায় উদ্বোধন হতে চলেছে জগন্নাথ মন্দিরের। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে মহাযজ্ঞ, যেখানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত রয়েছেন। কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। শুভ মুহূর্ত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে অক্ষয়তৃতীয়ার দিন, বুধবার। সেই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সোমবার থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকতনগরী দিঘায় অবস্থান করছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে মহাযজ্ঞে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ণাহুতি শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই যজ্ঞে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছেন। প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি। ধর্ম কখনও ভাষণ দিয়ে প্রচার করা যায় না, তা হৃদয় থেকে অনুভব করতে হয়। মা, মাটি আর মানুষ যদি ভালো থাকে, তবেই আমি ভালো থাকব। তাই আমি সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করছি।”

তিনি আরও জানান, বুধবার বেলা আড়াইটে থেকে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান শুরু হবে। বিকেল ৩টের সময় মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে এবং ৫ মিনিটের জন্য মন্দিরের দরজা সকলের জন্য খোলা থাকবে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রসঙ্গত গত রবিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর বিধি মেনে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ। মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণের সামনে অস্থায়ী আটচালা ঘরে এই হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে প্রতি দিন দু’বেলা পুজো এবং যজ্ঞ চলছে।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে ৫৭ জন সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধু এই আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুসারে, মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে শুরু হয় মহাযজ্ঞ। এই যজ্ঞে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি।

মঙ্গলবারই দিঘায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাযজ্ঞে পূর্ণাহুতি দেন তিনি নিজেই এবং নিজের হাতে আরতি করেন। পরে বলেন, “মা-মাটি-মানুষের মঙ্গল কামনায় পুজো দিয়েছি। ওরাই ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব।”

যজ্ঞ চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা তথা মমতার ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে পূর্ণাহুতি সম্পন্ন হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে পুরোহিতদের শরবতের গ্লাস তুলে দেন, সম্মান জানান এই বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানে তাঁদের ভূমিকার জন্য।

সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন এবং জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রথা মেনে এই গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনা করবেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি।

মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে শুধু জেলা নয়, রাজ্য এবং প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও বহু পুণ্যার্থী ভিড় করবেন সৈকতনগরী দিঘায়। দর্শনার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কারণে গোটা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় বড়সড় রদবদল করা হয়েছে।

যাঁরা ওল্ড দিঘা থেকে মন্দির দর্শনে যাবেন, তাঁদের ১১৬বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আর নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে আগত দর্শনার্থীরা শনিমন্দিরের সামনে দিয়ে একই সড়ক ধরে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন।

মন্দির উদ্বোধনের অনেক আগেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বড় এলইডি স্ক্রিন বসিয়ে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে অনেক জেলা সভাপতিই ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন।

তবে সম্প্রতি নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে, শুধু এলইডি স্ক্রিনে সম্প্রচার করলেই চলবে না, স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের জন্য উপযুক্ত বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং আয়োজন করতে হবে জগন্নাথদেবের ভোগ বিতরণেরও। প্রয়োজনে দিঘার মন্দির উদ্বোধনের পরে সাধারণ মানুষকে একত্র করে বসিয়ে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর সফরের সময় দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও কোভিড মহামারির কারণে কিছু সময়ের জন্য নির্মাণ কাজ স্থগিত থাকে, পরে দ্রুত গতিতে তৈরি হয় ‘সম্পূরা’ শৈলীতে এই মন্দির। মন্দির নির্মাণে নিযুক্ত করা হয়েছিল রাজস্থান থেকে আনা প্রায় ৮০০ জন দক্ষ কারিগরকে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণেও যুক্ত ছিলেন।

মন্দির চত্বরে রয়েছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও গর্ভগৃহ—পুরী মন্দিরের আদলেই। বিশেষভাবে নির্মিত নাটমন্দিরটি ভর করে রয়েছে ১৬টি সুন্দর খোদাই করা স্তম্ভের উপর। সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত থাকবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি, যাঁদের ঘিরেই আবর্তিত হবে এই তীর্থস্থানের আচার-অনুষ্ঠান।

Comments are closed.