ডিজিটাল ডেস্ক, ২ মে: ভারতীয় বিমানের উপর আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান, যার প্রভাব সরাসরি পড়তে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর। সূত্রের খবর, পাকিস্তান যদি টানা এক বছর ভারতের বাণিজ্যিক বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ রাখে, তবে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে ৫ হাজার কোটি টাকা। এই সম্ভাব্য বিপুল আর্থিক ক্ষতি নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে একাধিক বেসরকারি ও সরকারি উড়ান সংস্থা।
একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী এক বছরে পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকলে, এয়ার ইন্ডিয়ার প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ ৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৫০৫১ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় উত্তর ভারতের শহরগুলিতে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক বিমানগুলোর জন্য ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির সাপ্তাহিক খরচ প্রায় ৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। মাসের হিসেবে এই খরচের বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা হতে পারে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে উড়ানের খরচ বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট এবং আকাসা এয়ার-সহ একাধিক বিমান সংস্থা। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের কাছে এই সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পাক আকাশসীমা বন্ধ থাকার ফলে তাদের কার্যত বড়সড় আর্থিক চাপে পড়তে হচ্ছে।
বিকল্প কোন রুট ব্যবহার করলে খরচ কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে, সেই নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকেও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র এবং উড়ান সংস্থাগুলির সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করার চেষ্টা চলছে। যদিও এই বৈঠক নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকার বা কোনও বিমান সংস্থার তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। নিহতদের মধ্যে একজন স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাকিরা সবাই ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণে আসা পর্যটক। তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে, এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী।
হামলার পর দিল্লি থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখা, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল, এবং পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মীসংখ্যা কমিয়ে আনা। এর পালটায় পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলিকে আর তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হওয়ার আগে উত্তর আমেরিকামুখী উড়ানগুলিতে সাধারণত প্রায় ১৬ ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু এখন বিকল্প রুট ব্যবহার করতে হওয়ায় সেই যাত্রায় গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য প্রতিটি উড়ানে গড় খরচ বাড়ছে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা।
একইভাবে, ইউরোপগামী বিমানের ক্ষেত্রেও সময় ও খরচ দুইই বেড়েছে। আগে যেখানে যাত্রা সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেখানে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির খরচ বাড়ছে প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ টাকা প্রতি উড়ানে।
পিটিআই-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে যাতায়াতকারী বিমানগুলোকেও প্রায় ৪৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে, যার ফলে প্রতি ফ্লাইটে খরচ বেড়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
ওই প্রতিবেদন আরও জানাচ্ছে, উত্তর ভারতের শহরগুলি থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮০০-র বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রওনা দেয় উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ও পশ্চিম এশিয়ার মতো গন্তব্যের উদ্দেশে। মাসের হিসেবে এই সংখ্যা ৩,০০০-এরও বেশি, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ফ্লাইট যায় পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
Comments are closed.