ডিজিটাল ডেস্ক, ৩ মে: জাল পাসপোর্ট কাণ্ডের তদন্তে নেমে যেন একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তানের ভূমিকা এখন স্পষ্টতই ধরা পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, এ রাজ্যের পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলাতেও উঠে এসেছে পাকিস্তান-যোগের চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিরাটি থেকে ধৃত এক পাক নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (IB)। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলিকে এক কথায় বলা চলে—অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিরাটি থেকে ধৃত পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলার মূল অভিযুক্ত পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মল্লিককে কেন্দ্র করে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-এর হাতে। ED সূত্রে খবর, আজাদ মল্লিককে জেরা করে প্রায় ২০০টি ভুয়ো পাসপোর্টের তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীদের অনুমান, আসল সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, আজাদের কাছে বিপুল সংখ্যক জাল পাসপোর্ট রয়েছে বলে আশঙ্কা। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই ব্যক্তি একটি বড় আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের মূলহোতা, যার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের নাগরিকরাও ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়ে থাকতে পারেন।
তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গকে ঘাঁটি করে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা? এমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তদন্তে। ইডি (ED) সূত্রের খবর, এই সম্ভাবনাও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়—দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো মহানগর থেকে গুজরাত ও রাজস্থানের মতো রাজ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে আজাদ মল্লিকদের জাল পাসপোর্ট চক্রের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। ইডির তরফে এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। কারণ, যদি সত্যিই পাকিস্তানি নাগরিকেরা এই চক্রের সহায়তায় গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকে, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে গত ১৫ এপ্রিল কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ওইদিনই উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আজাদ মল্লিককে। সম্প্রতি আদালতে ED জানায়, আজাদ মল্লিক আদতে বাংলাদেশের নয়, পাকিস্তানের নাগরিক। নিজের পাকিস্তানি পরিচয় গোপন রাখতে, সে ভুয়ো বাংলাদেশি পরিচয় ব্যবহার করত। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আজাদ ভুয়ো পরিচয়ে ভারতে ভিসার আবেদনও করেছিল। প্রায় ১৩ বছর আগে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করে সে। নাম ও পরিচয় বদলে, কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ রাজ্যে অবস্থান করছিল আজাদ — এমনটাই সন্দেহ ED-র গোয়েন্দাদের।
তদন্তকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, আজাদ কি কোনও স্লিপার সেলের সদস্য? ভারতীয় পরিচয়পত্র জাল নথির মাধ্যমে বানিয়ে দেওয়ার পিছনে কি আরও গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে? আজাদের মতো আরও পাক নাগরিক কি নাম পাল্টে রাজ্যে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে? ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ ও নিরাপত্তা সংশয়।
Comments are closed.