Operation Sindoor DGMO meet : সফল ‘অপারেশন সিঁদুর’, তিন সেনাকর্তার সাংবাদিক বৈঠক

7

ডিজিটাল ডেস্ক, ১১ মে : সোমবারের বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কী আলোচনা হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত বৈঠকের সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কোনও সরকারি বক্তব্য প্রকাশ্যে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় ভারতের সামরিক বাহিনীর ডিজিএমও স্তরের আধিকারিকেরা সাংবাদিক বৈঠকে বসেছেন।

তিন বাহিনীর সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয় যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিকল্পনার প্রধান সামরিক লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত অপরাধী ও পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দেওয়া এবং জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা (Operation Sindoor DGMO meet)।

ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানিয়েছেন, ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে পরিচালিত হামলায় ১০০-র বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইউসূফ আজ়হার, আব্দুল মালিক রাউফ এবং মুদস্‌সর আহমেদের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত ব্যক্তিরাও রয়েছে।

ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানিয়েছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে জনবহুল গ্রাম এবং গুরুদ্বারের মতো ধর্মীয় স্থানে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে।

বায়ুসেনার এয়ার মার্শাল একে ভারতী সাংবাদিক বৈঠকে বহাওয়ালপুরে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের দৃশ্য উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি, মুরিদকের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলার পরবর্তী পরিস্থিতির চিত্রও প্রকাশ করা হয় ওই বৈঠকে।

ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানিয়েছেন, ৯-১০ মে রাতের মধ্যে পাকিস্তান ভারতীয় আকাশসীমায় ড্রোন ও বিমান প্রবেশ করিয়ে হামলার চেষ্টা করে। তারা বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল, তবে অধিকাংশ হামলাই সফলভাবে প্রতিহত করা হয়। যদিও কিছু ড্রোন ও বিমান ভারতের মাটিতে আছড়ে পড়ে, তবে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ভারতের সামরিক বাহিনীর তরফে সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে যে, পাকিস্তানের সেনা বা সীমান্তের ওপারের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে ভারতের কোনও সংঘাত নেই। ভারতের লড়াই শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। পরিকল্পিত অভিযানে যে জঙ্গিদের নিধন করা হয়েছিল, তারা ধ্বংস হয়েছে। তবে পাকিস্তান এরপরও হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ভারতকে উপযুক্ত জবাব দিতে বাধ্য হতে হয়েছে।

ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ৩:৩৫ মিনিটে তাঁর পাকিস্তানি সমকক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়, যেখানে উভয় পক্ষই বিকেল ৫টা থেকে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। ঘাই জানান, এই প্রস্তাব প্রথমে পাকিস্তানের ডিজিএমও-এর তরফ থেকেই এসেছিল। পরবর্তীতে ১২ মে দুপুর ১২টায় আরও আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে হতাশাজনক হলেও প্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে। গত রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত পাকিস্তান একাধিকবার ড্রোন হামলার চেষ্টা চালিয়েছে, যার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে।

রবিবার ভারতীয় পক্ষ থেকে পাকিস্তানের ডিজিএমও-কে হটলাইনে বার্তা পাঠানো হয়েছে এবং ১০ মে’র সমঝোতা লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সেনাপ্রধান স্পষ্ট করেছেন যে রবিবার রাতে বা পরবর্তী সময়ে যদি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তবে সেনা কমান্ডারদের তা প্রতিহত করতে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান ডিজিএমও ঘাই।

এয়ার মার্শাল একে ভারতী জানান, এই অভিযানে বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা, এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই অভিযানের ফলাফল গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করতে পারবে।

এই সংঘাতের আবহে রাফাল যুদ্ধবিমানের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, এয়ার মার্শাল একে ভারতী সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, রাফাল এই সংঘর্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এই অভিযানে বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা, এবং সেই লক্ষ্যে সাফল্য এসেছে। তিনি আরও বলেন, এই অভিযানের ফলাফল গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে। রাফাল বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না-করার কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হলে তা শত্রুপক্ষের সুবিধা হতে পারে। তাই তিনি এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে, তিনি স্পষ্ট করে জানান যে এই সংঘাতের আবহে ভারতীয় বায়ুসেনার সমস্ত পাইলট নিরাপদ রয়েছেন।

ভারতীয় নৌসেনার ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ জানান, পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে নৌসেনার ডুবোজাহাজ, বিমান-সহ সমস্ত বিভাগকে সংঘাতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সমুদ্রে মোতায়েন করে দেওয়া হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদী হামলার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে নৌসেনা আরব সাগরে বেশ কিছু কৌশলগত অবস্থান নেয়। উত্তর আরব সাগরে এমন জায়গায় বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল যেখান থেকে নিজেদের পছন্দ মতো সময়ে করাচি-সহ বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা ছিল নৌসেনার। ভারতীয় নৌসেনার কৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তানি নৌসেনাকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিতে হয়েছিল এবং সেগুলি বেশির ভাগই নিজেদের বন্দর বা উপকূলের কাছাকাছিই রয়ে গিয়েছিল।

Comments are closed.