কলকাতা, ১৭ মে : ট্যাংরার দে পরিবারের তিন সদস্য খুনের ঘটনায় অবশেষে পরিবারের বড় ছেলে, প্রণয় দে-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার এনআরএস হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই তাঁকে গ্রেফতার করে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁকে ৩০ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে (Tangra Case Update)।
উল্লেখ্য ট্যাংরায় অভিজাত দে পরিবারের দুই স্ত্রীর হাতের শিরা ও গলা কেটে ও কিশোরী মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর নাবালক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দুই ভাই প্রণয় ও প্রসূন। বাড়ির ছোট ছেলে প্রসূন দে গ্রেফতারির পর জেলেই রয়েছেন। তিনিই পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ। দাদা প্রণয় দে সঙ্গী ছিলেন ভাইয়ের। এদিন তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে এনআরএসে ভর্তি ছিলেন।
দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি—সব মিলিয়ে দে পরিবারকে সবাই বিত্তশালী হিসেবেই চিনতেন। ট্যাংরা কাণ্ড সামনে আসার আগে পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেননি, অর্থনৈতিক অনটন কখন নিঃশব্দে তাঁদের ভিত্তি নড়বড়ে করে দিয়েছে। তিনজনের দেহ উদ্ধারের পর সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর্দা উঠতেই পরিচিতরা হতবাক হয়ে যান। এতদিন যে পরিবারকে সমৃদ্ধশালী মনে করা হয়েছিল, তাঁদের আর্থিক সংকটের বাস্তব রূপ প্রকাশ্যে আসায় বিস্ময়ের সঞ্চার হয়।
প্রণয় ও প্রসূন তাঁদের পরিবারের এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য মেক্সিকোর একটি এজেন্সিকে দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, বহু বছর ধরে তাঁদের সংস্থা মেক্সিকোর ওই সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং তাঁদের কারখানায় তৈরি চামড়ার ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লাভস’-এর সিংহভাগই ওই এজেন্সির মাধ্যমে রপ্তানি হত। তবে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। অভিযোগ, সংস্থাটি গড়ে মাত্র কুড়ি শতাংশ টাকা পরিশোধ করে, বাকি অর্থ আত্মসাৎ করে। পাশাপাশি, রাশিয়া, মেক্সিকো ও সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার চামড়ার গ্লাভস ফেরত পাঠানো হয়। প্রণয় ও প্রসূন, দু’জনই পুলিশের কাছে দাবি করেছেন যে, এই প্রতারণার কারণে তাঁদের ব্যবসার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে এবং তাঁরা সরবরাহকারীদের বকেয়া টাকা মেটাতে পারছিলেন না। জানুয়ারি মাসে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, যেসব সরবরাহকারীরা আগে তাঁদের সম্মান করতেন, তাঁরাই অফিসে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। এমনকি পাওনাদারদের তরফে তাঁদের কলার ধরে বাইরে নিয়ে যাওয়ার, মারধর করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। এই চাপ ও সংকট থেকেই তাঁরা পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।