ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ মে : ভারতের হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একটি বিশাল গুপ্তচরচক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও তিনি ভ্রমণবিষয়ক ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তদন্তে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে যে তিনি পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন—একটি এলাকা যা সাধারণত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জ্যোতি মালহোত্রা। আইএসআই কৌশলগতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাজে লাগিয়ে তাদের মাধ্যমে শুধু তথ্য সংগ্রহ করেনি, বরং পাকিস্তানের স্বার্থে অনুকূল প্রচার চালানোর দায়িত্বও দিয়েছিল অভিযুক্তদের।
সূত্রের খবর জ্য়োতির ক্লাউড অ্য়াকাউন্টে ভারতের গোপন ভিডিও-এর সন্ধান মিলেছে (Jyoti Malhotra Vlogging Videos ISI)। বিএসএফ-এর কনভয় মুভমেন্টের ছবি মিলেছে জ্য়োতির ক্লাউডে, পাঠানকোট, নাথুলা পাস, অরুনাচলের একাধিক স্পর্ষকাতর এলাকার ভিডিও-এর সন্ধান মিলেছে। জ্য়োতিকে জেরা করে ভিডিও হাতে পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ISI কে এই সব ভিডিও পাঠাত জ্য়োতি দাবি তদন্তকারীদের, ভ্লগিং-এর আড়ালে স্পর্ষকাতর এলাকার ভিডিও তুলত জ্য়োতি বলে জানা যাচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল, প্রথমে জ্যোতি মালহোত্রা পাকিস্তানি হাইকমিশনের কর্মকর্তা এহসান দার ওরফে দানিশের সঙ্গে যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছিলেন। উল্লেখ্য, পহেলগাম হামলার পর ১৩ মে দানিশকে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সূত্রের খবর দানিশের সঙ্গে একাধিক চ্যাট ডিলিট জ্য়োতিরক, জ্য়োতির ফোন রেকর্ড খতিয়ে দেখে চাঞ্চল্য়কর তথ্য় তদন্তকারীদের হাতে। অপারেশন সিঁদুর ও ব্ল্য়াকআউট চলাকালীন দানিশের সঙ্গে চ্য়াট ডিলিটকরেছিলেন জ্যোতি। জানা গেছে হিসারে ব্ল্য়াক আউট চলাকালীন দানিশের সঙ্গে চ্য়াট লগ ডিলিট করে জ্য়োতি, চ্যাটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল, বলছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর চ্য়াট ডিলিটের কথা জেরায় স্বীকার করেছে জ্য়োতি।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পহেলগাঁও হামলার কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান সফর করেছিলেন জ্যোতি মলহোত্রা। তিনি ১৪ দিন মুরিদকে-তে অবস্থান করেছিলেন, এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেই সফরের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। তবে, তাঁকে কোন অভিযানের দায়িত্বে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পাকিস্তানে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন সংবেদনশীল এলাকায় অবাধে যাতায়াতের অনুমতি পেয়েছিলেন। এমনকি, পাক পুলিশ তাঁর জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল বলেও খবর রয়েছে। জ্যোতি অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন, এবং লাহৌরের আনারকলি বাজার ও পাক পঞ্জাবের কটাস রাজ মন্দির পরিদর্শন করেন। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে পাকিস্তানের খাবার ও ভারত-পাকিস্তানের সংস্কৃতির তুলনা সংক্রান্ত ভিডিও রয়েছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সেই সময়ই তিনি মুরিদকেতে গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় সেনা মুরিদকের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে।
অভিযোগ উঠেছে যে জ্যোতি মলহোত্রা পাকিস্তানে গিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-তৈবার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে লশকর-ই-তৈবার প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মুরিদকে-তে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাঁকে একটি বিশেষ অভিযানের জন্য ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে সেই অভিযান শুরুর আগেই হিসার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। জ্যোতির ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিয়ো ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, তিনি মাস দুয়েক আগে, অর্থাৎ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার আগে পাকিস্তান গিয়েছিলেন।
বর্তমানে জ্যোতি মালহোত্রা পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এনআইএ, আইবি এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ তদন্ত দল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্তকারীদের মতে, তিনি বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়ে জেরা এড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছেন।