Mamata Banerjee on Police : পুলিশ কি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করে? গ্রুপ তো পলিটিক্যাল লিডাররা করে! ডিজি-কে ধমক মুখ্যমন্ত্রীর
ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ মে : উত্তরকন্যার প্রশাসনিক বৈঠক যেন একটি কঠোর মূল্যায়ন পর্ব! ৯০ মিনিটের এই বৈঠকে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান জেলা ধরে ধরে উন্নয়নের রিপোর্ট তলব করেন। বৈঠকের শুরু থেকেই পুলিশের কিছু গোষ্ঠীর কার্যকলাপ ও সরকারি কাজে বিলম্বের প্রসঙ্গ তুলে একাধিক প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee on Police)। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে তিনি রাজ্যের পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা (ডিজি) রাজীব কুমারকে কড়া সতর্কবার্তা দেন। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বলতে বলতে জিভ ক্ষয়ে গেল! আর কতবার বলতে হবে?”
প্রশাসনিক বৈঠকের একেবারে শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন কোচবিহারের সাংসদ জগদীশ বাসুনিয়া। তিনি অভিযোগ করেন যে গ্রামাঞ্চলে নতুন রাস্তা নির্মাণের ফলে পুরনো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ অতিরিক্ত লোডেড ট্রাক ঢোকানো হচ্ছে। সাংসদের কথা শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “আমি বারবার বলেছি, গ্রামীণ রাস্তায় লোডেড ট্রাক চলবে না। কিন্তু কেন পুলিশ এখনও এটা কার্যকর করছে না? রাজীব (ডিজি), আমি আর কতবার বলব?” ডিজি রাজীব কুমার দৃশ্যতই অপ্রস্তুত হয়ে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন এবং বলেন, “ম্যাডাম, আমি বিষয়টি দেখে নিচ্ছি।”
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে গ্রামীণ রাস্তায় লোডেড ট্রাক চলাচল নিয়ে। তিনি বলেন, “বারবার বলা হয়েছে, গ্রামীণ রাস্তায় লোডেড ট্রাক ঢোকানো যাবে না। বাজেট সীমিত থাকা সত্ত্বেও রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে, কিন্তু এভাবে রাস্তা নষ্ট হলে তার কোনো অর্থ থাকে না। বারবার একই কথা বলতে ভালো লাগে না!” আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, “যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সহজেই সমাধান করা যায়, সেগুলি কেন করা হচ্ছে না? জনগণের দরকারি কাগজপত্র কি আপনারা যথাযথভাবে যাচাই করেন না? সময়মতো কাজ না করলে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়!” তিনি প্রশাসনের কাজের গতি বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, “আমি শুধু আলিপুরদুয়ার নয়, রাজ্যের প্রতিটি জেলাকে বলছি। অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি—শুধু ভাষণ নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।” এরপর তিনি পুলিশের লবিবাজি প্রসঙ্গে সরব হন। প্রশাসনিক বৈঠকের মাঝেই কোচবিহারের ডিএসপি হেডকোয়াটার্সের খোঁজ করেন, কিন্তু দেখা যায় তিনি উপস্থিত নেই। এ নিয়ে জেলার পুলিশ সুপারের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোচবিহারের ডিএসপি হেডকোয়াটার্সকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না! তোমরা কেন নিজেরাই গোষ্ঠী তৈরি করছ? এভাবে কীভাবে কাজ হবে? কেউ যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চায়, তাকে বাধা দেওয়া হবে কেন?” তিনি আরও বলেন, “পুলিশ কি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ তৈরি করে? গ্রুপ তো রাজনৈতিক নেতারা তৈরি করেন! এতদিন আমি এটাই জেনে এসেছি!”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, “আমি জানি কিছু সংবাদমাধ্যম এটিকে অন্যভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে। তবে এটা প্রশাসনিক মিটিং, আশা করি কেউ কাউকে ছোট করবেন না।” এরপর মালদহের পুলিশ সুপারের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, “মালদহেই বারবার দাঙ্গা কেন হয়? অপারেশন দাঙ্গার প্রয়োজন কেন?” তিনি সতর্ক করে বলেন, “কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়। আই বি-কে আরও সক্রিয় হতে হবে, ভিলেজ পুলিশের ভূমিকা আরও কার্যকর করতে হবে। সকলে মনে রাখুন, দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ আলাদা নয়—শান্তি বজায় রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।” উত্তরবঙ্গের জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “অনেকগুলো ওষুধ বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো যেন হাসপাতালের মজুদে না থাকে। এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেছে কিনা, তা নিয়মিতভাবে সারপ্রাইজ ভিজিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে।”
সরকারি কাজের গড়িমসি নিয়ে কড়া প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়ায় তিন মাস, তারপরে শর্ট আউট করতে আরও চার মাস—এই গয়ংগচ্ছ মনোভাব বন্ধ করতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “অনেক এলাকায় পাইপ বসানো হয়েছে, কিন্তু এখনও জল পৌঁছায়নি।” তাই তিনি ফিল্ড ইন্সপেকশন বাড়ানোর নির্দেশ দেন এবং বলেন, “শুধু তথ্য সংগ্রহ করলেই হবে না, কাজও ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী একেবারে ক্লাসের কড়া শিক্ষিকার মতো প্রশাসনিক বৈঠকে নোট ধরে ধরে বিষয় যাচাই করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, “আমি আন্দাজে মিটিং করতে পারতাম, কিন্তু আমি যথাযথভাবে কাগজপত্র স্টাডি করে এসেছি।”
Comments are closed.