ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ জুন : সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে গতি আনতে শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে ঘটনার পুনর্গঠন করে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগকারিণীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে কলেজ চত্বরে ঘটনার বিভিন্ন পর্যায় পুনর্নির্মাণ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে (Kasba Rape Update)।
কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৫ জুন দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত কলেজ চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে কলেজেরই নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে—তিনজন ছাত্র এবং একজন নিরাপত্তারক্ষী।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, অভিযোগকারিণীর বয়ান ও সিসিটিভি ফুটেজে প্রাথমিকভাবে মিল লক্ষ্য করা গেছে। ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার সময়ে অভিযুক্ত তিন ছাত্র ও নিরাপত্তারক্ষী সংশ্লিষ্ট ঘরের আশপাশে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগকারিণীর দাবি, ওই নিরাপত্তারক্ষী সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তিনি তাঁকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় কলেজের ইউনিয়ন রুমে শুরু হয়েছিল কিছুটা ধস্তাধস্তি। এরপর অভিযোগকারিণীকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে, যেখানে তিনি আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হন বলে জানিয়েছেন। তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্তদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল গোটা ঘটনার পেছনে। তাঁদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে সরাসরি শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে, আর বাকি দু’জন তাকে সহায়তা করেন। নিরাপত্তারক্ষী সেই সময় ঘরের বাইরে থাকলেও, তাঁর নিষ্ক্রিয় অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ধৃত নিরাপত্তারক্ষী অসংলগ্ন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ঘটনার সময় তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাই নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, না কি আরও কেউ উপস্থিত ছিলেন—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রদীপকুমার ঘোষাল। পাশাপাশি, অভিযোগকারিণী ও তাঁর বাবা-মায়ের গোপন জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
ধৃত তিন ছাত্রকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন শুক্রবার আদালত তাঁদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। গোটা ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা। অভিযোগকারিণী যেসব তথ্য লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তার বেশিরভাগই সিসিটিভি ফুটেজে মিল পাওয়া গেছে। বর্তমানে SIT সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ ও অভিযুক্তদের জেরা করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।