ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ জুন : রবিবার বীরভূমের সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানির শিকার হলেন একজন তৃণমূল নেত্রী, যিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পদে রয়েছেন। অভিযোগ, দলেরই এক নেতার সঙ্গে সরকারি নথিতে সই করার জন্য দেখা করতে গেলে, উপস্থিত কিছু সহকর্মী—যাঁরা ওই নেতার বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য বলে জানা গেছে—তাঁকে হেনস্থা করেন। ঘটনাস্থলে অপমানজনক মন্তব্য করা হলে, প্রতিবাদ জানাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময় এক তৃণমূল কর্মী হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে আহত হন এবং বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন। পুরো ঘটনায় আবারও রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জটিলতা সামনে এসেছে (Birbhum TMC Molestation)।
ঘটনাটি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগকারিণী তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, রবিবার দিনের আলোয় রাস্তার মাঝখানে তাঁকে ওড়না ধরে টানাটানি করা হয় এবং শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়। এমনকি ওড়না খুলে গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও দাবি তাঁর। তাঁর কথায়, “আমার সঙ্গেই যদি এমনটা হয়, সাধারণ নারীরা কতটা সুরক্ষিত—সেই প্রশ্নই উঠে যায়!” এই ঘটনার সময় তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা এক তৃণমূল কর্মীকেও মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন।
অভিযোগ দায়েরের পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা পাগল নই যে দিনে-দুপুরে কাউকে এভাবে আক্রমণ করব।” তাঁদের দাবি, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এতটাই চরমে উঠেছে যে, এখন নিজেদের দলের মহিলা নেত্রীরাও সুরক্ষিত নন। তিনি দাবি করেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমরা ওই সভানেত্রীকে মনোনয়ন দিতে চেয়েছিলাম, তখনই নুরুল ইসলাম বাহিনী তাঁর ওপর হামলা করেছিল।” তাঁর কটাক্ষ, “এই ভাবেই তৃণমূল নিজের পতনের পথ তৈরি করছে।”
সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের পুরনো সমস্যা। অভিযোগকারী নেত্রী ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, এবং অভিযুক্তরা মূলত তাঁর বিরোধী শিবিরের সদস্য। স্থানীয় মহলের মতে, দলীয় দখলদারিত্ব ও ব্লকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ঘিরেই দুই পক্ষের এই টানাপোড়েন বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এই সাম্প্রতিক ঘটনায় যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও মুখ খোলেননি, তবে জেলাস্তরের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব যে দলের সার্বিক ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে—তা আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না।