ডিজিটাল ডেস্ক, ৩ জুলাই : অমরনাথ যাত্রা শুরু হল এক ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত আবহে। বুধবার জম্মুর ভগবতী নগরে উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহার হাতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় এই পবিত্র যাত্রার। সন্ধ্যায় প্রথম দফার যাত্রীরা পৌঁছন কাশ্মীরে, যেখানে তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা. পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে বেসক্যাম্প থেকে পবিত্র অমরনাথ গুহার উদ্দেশে রওনা দেন মোট ৫,৮৯২ জন তীর্থযাত্রী। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। ৩৮ দিনের এই আধ্যাত্মিক পথচলা শেষ হবে আগামী ৯ আগস্ট (Amarnath Yatra Begins)।
পহেলগাওঁয়ের জঙ্গি হামলার ছায়া এখনও রয়ে গেছে উপত্যকার উপর। নিরাপত্তার আশঙ্কায় পর্যটনের ভরা মরশুমেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বহু পর্যটক। বিমানের টিকিট সংরক্ষণ থেকে হোটেল বুকিং—সবেতেই পড়েছে বড় রকমের প্রভাব। এপ্রিল, মে ও জুন—এই তিনটি মাস সাধারণত পর্যটনের সেরা সময় হলেও এ বছর ফাঁকাই থেকেছে কাশ্মীরের গন্তব্যস্থলগুলি। এই হতাশার আবহেই আশার আলো হয়ে এসেছে অমরনাথ যাত্রা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হওয়া এই তীর্থযাত্রা কাশ্মীরবাসীদের জন্য যেন এক নবচেতনার বার্তা। তাঁদের কাছে এ শুধু পুণ্যার্থীর আনাগোনা নয়—এ হল অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াবার আর এক লড়াই। স্থানীয়দের আশা, অমরনাথ যাত্রায় যদি ভিড় বাড়ে, তবে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পর্যটনেও। পুণ্যার্থীদের দেখে আবার সাহস ফিরে পাবেন সাধারণ পর্যটকরা। কারণ, পর্যটনই যে কাশ্মীরের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ।
কাশ্মীর থেকে পবিত্র অমরনাথ গুহায় পৌঁছনোর দুটি পথ রয়েছে—একটি পহেলগাঁও হয়ে, আরেকটি বালতাল হয়ে। পহেলগাঁও রুটটি ঐতিহ্যবাহী ও দীর্ঘতর—এ পথে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। অপরদিকে বালতাল রুট তুলনামূলকভাবে ছোট, যেখানে ট্রেকের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটারের মতো। বহু বছর ধরে দেশ-বিদেশের বহু তীর্থযাত্রী পহেলগাঁওয়ের পথেই এই পবিত্র যাত্রা সম্পন্ন করেছেন। তবে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার জেরে এই চিরাচরিত রুটে ভ্রমণ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। পর্যটকরা আদৌ সেই পথে পা বাড়াবেন কিনা, তা ছিল অনিশ্চিত। কিন্তু যাত্রার শুরুতে দেখা গিয়েছে—কেউ কেউ ট্রেকিং রুট বেছে নিলেও, বহু তীর্থযাত্রী ঐতিহ্য মেনে হেঁটে চলেছেন পহেলগাঁও পথেই। এই দৃশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
২২ এপ্রিল বৈসরণ উপত্যকায় ২৬ জন পর্যটককে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। ঘটনার ভয়াবহতা আরও বেড়ে যায় যখন জানা যায়, হামলার আগে নির্দিষ্টভাবে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করা হয়েছিল। এভাবে বেছে বেছে হত্যার ঘটনাকে দেখে অনেকেই মনে করছেন, এ বার জঙ্গিদের নিশানায় উপত্যকার বাইরের পর্যটকরাই। এই আতঙ্কের আবহে জম্মু-কাশ্মীরে পা রাখতেই অনেক পর্যটক এখন দ্বিধান্বিত। তবে সেই ভয়ের মধ্যেই আশার আলোর মতো রয়েছে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা প্রস্তুতি। অমরনাথ যাত্রার জন্য নির্ধারিত দুটি রুট—পহেলগাঁও এবং বালতাল—উভয় পথেই মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। যাত্রার আগেই চলছে সতর্ক নজরদারি ও তল্লাশি। যদিও অতীতেও অমরনাথ যাত্রায় হামলার নজির রয়েছে, তবু এবার পরিস্থিতির ভয়াবহতা আলাদা—কারণ এই প্রথম, ধর্মীয় পরিচয় বাছাই করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তাই এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার গুরুত্ব আরও অনেক বেশি।