ডিজিটাল ডেস্ক ১০ই জুলাইঃ এসএসসির নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না ‘চিহ্নিত অযোগ্য’রা। কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখল বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-এর ডিভিশন বেঞ্চ । তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে এসএসসি(SSC Update News)।
এসএসসির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য যে রায় দিয়েছিলেন,তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে রাজ্য এবং এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন)। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫ হাজার ৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেলভুক্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য শিক্ষা দফতর। কিন্তু অভিযোগ ওঠে,এসএসসি-র ২০২৫-এর ওই বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী।
ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের নির্দেশ,কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন,সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে।
যোগ্যদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য সওয়াল করেছেন যে ২০১৬ সালের নিয়োগে কেন নতুন ভ্যাকেন্সি জোড়া হল? নতুন শূন্যপদে আলাদা করে নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন ৩০ মে বিজ্ঞপ্তিজারি করে ,২০১৬ সালের ভ্যাকেন্সির সঙ্গে নতুন ভ্যাকেন্সি জুড়েছে । এটা সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশের সরাসরি লঙ্ঘন। যাদের চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। তাদেরকেই ফের নতুন পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে কিভাবে?
পাশাপাশি আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রের সওয়াল জবাবে উঠে আসে দূর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিমকোর্ট “দাগী” আর “দাগী নয় “এই দুটো ভাগ করেছে। বাকিরা পরিস্থিতির স্বীকার। একই অপরাধের জন্য দুবার শাস্তির যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়ালে উঠে আসে অয্যোগ্যদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া স্বাভাবিক ন্যায়ের পরিপন্থী। বিকাশ ভট্টাচার্য অসফল প্রার্থীদের পক্ষে সওয়াল করছেন। এও উঠে আসে তার সওয়াল জবাবে অযোগ্যদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা শাস্তি পেয়েছে। পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া মানে দ্বিতীয় বার শাস্তি দেওয়া।
হাইকোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়,সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। বিজ্ঞপ্তির বাকি অংশে আদালত হস্তক্ষেপ করেনি। সে ব্যাপারে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা ১৭ জুলাই।
হাইকোর্টে নিজেদের অবস্থান জানায় রাজ্য এবং এসএসসি। বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা নেই যে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন না। রাজ্যের আরও যুক্তি ছিল, ‘অযোগ্য’দের চাকরি গিয়েছে। বেতন ফেরত দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই শাস্তির পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়াটা আরও এক শাস্তি। তাই এসএসসি ও রাজ্যের আইনজীবীর সওয়াল,একই অপরাধের জন্য কাউকে দু’বার শাস্তি দেওয়া যায় না।
যদিও এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন,‘‘কমিশনের কাছ থেকে এই ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত নয়।’’ তার পরেই হাইকোর্ট জানায়, শুধু ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’দের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। তাতে আবার রাজ্য ও এসএসসি সন্তুষ্ট না হওয়ায় ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়। সেই মামলার রায়েই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল একক বেঞ্চের নির্দেশ বহাল থাকবে। কোনও চিহ্নিত অযোগ্যই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এর থেকে এটুকু স্পষ্ট কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য।