ডিজিটাল ডেস্ক, ১ মে: পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে কয়েক জন ‘ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ বা ওজিডব্লিউ—যারা মূলত জঙ্গিদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করত। তাঁদের জেরা করে এনআইএ জানতে পেরেছে, বৈসরন উপত্যকার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের আরও তিনটি জায়গায় হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ঘাতকেরা ১৫ এপ্রিলেই পহেলগাঁওয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তারা শুধু বৈসরন উপত্যকায় ‘রেকি’ করেনি, বরং আরু উপত্যকা, লিডার অ্যামিউজ়মেন্ট পার্ক এবং বেতাব উপত্যকাও ঘুরে দেখেছিল হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।
তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০ জন ‘ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ বা ওজিডব্লিউ-কে চিহ্নিত করেছে এনআইএ। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, হামলার আগে বৈসরন উপত্যকায় রেকি করতে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সহায়তা করেছিল চার জন স্থানীয় ওজিডব্লিউ। এনআইএ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বৈসরন উপত্যকায় তিনটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। তার মধ্যে দু’টির সিগন্যাল ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা গেছে। গোটা হামলার ঘটনার তদন্তে সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ১৮৬ জন বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন এবং তাঁদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পহেলগাঁও হামলার তদন্তে বিশেষভাবে গঠিত ৪৫ জনের একটি দল কাজ শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এই বিশেষ দলে রয়েছেন আইজি, ডিআইজি এবং এসপি স্তরের আধিকারিকরা। দলের প্রধান দায়িত্ব হল বৈসরন উপত্যকায় হামলাস্থলে প্রবেশপথ থেকে শুরু করে গোটা এলাকার একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র (থ্রিডি ম্যাপ) তৈরি করা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ বিশদভাবে নথিভুক্ত করা। এর পাশাপাশি ঘটনার ফরেন্সিক বিশ্লেষণও চলবে। তদন্তকারীদের লক্ষ্য, এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে হামলার ঘটনাটি পুনর্গঠন করে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ গড়ে তোলা।
এদিকে, পর্যটকদের এক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, হামলার সময় জ়িপলাইন অপারেটর মুজ়ামিল আহমেদ কুমহার ধর্মীয় ধ্বনি দিচ্ছেন। তাঁকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। যদিও মুজ়ামিলের পরিবারের দাবি, সেটি ছিল আতঙ্কের মুহূর্তে তাঁর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, কোনও জঙ্গি-সহযোগিতা নয়। এমনকি কিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, এনআইএ-র একাংশও মেনে নিচ্ছেন যে মুজ়ামিল সম্ভবত ভয় পেয়ে ওই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
Comments are closed.