ডিজিটাল ডেস্ক, ২ জুলাই : বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (Bangladesh Hasina Jail)। আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান নেওয়া, এবং পুলিশ ও তদন্তকারীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এই মামলা দায়ের হয়েছিল। এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সেই অভিযোগ আরও জোরাল হয় এবং মামলা এগোয়। বুধবার চূড়ান্ত শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং মামলার আরেক অভিযুক্তকে দুই মাসের সাজা ঘোষণা করে। হাসিনার পদচ্যুতি পরবর্তী সময়ে এটিই প্রথম রায়, যাতে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করল।
হাসিনার বিরুদ্ধে যে ফোনালাপের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়, তাতে একটি নারীকণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, “আমার নামে আড়াইশো খুনের মামলা হয়েছে। অর্থাৎ আমি আড়াইশোটা খুন করার পারমিশন পেয়ে গিয়েছি।” এই মন্তব্যকেই মামলার মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তদন্তকারীদের প্রতি হুমকির ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করে ট্রাইব্যুনাল।
ওই ফোনালাপে নারীকণ্ঠকে আরও বলতে শোনা যায়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর যারা পুলিশ এবং তদন্তের নামে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। “এক মাঘে শীত যায় না”—এই প্রবাদ ব্যবহার করে তিনি ইঙ্গিত দেন, সময় এলেই প্রত্যাঘাত হবে। একই সঙ্গে, বিএনপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হত্যা, অপহরণ, মারধর এবং ঘরবাড়ি লুট করছে, তাদের কেউই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। প্রত্যেককে একই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে—এই বার্তাই উঠে আসে সেই ফোনালাপ থেকে।
বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের বেঞ্চের রায়ের ব্যাখ্যায় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, ফোনালাপে শোনা গিয়েছিল যে কণ্ঠস্বর, সেটি শেখ হাসিনারই। পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং প্রমাণিত হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওই হুমকি দিয়েছেন। তাজুল ইসলাম আরও জানান, ফোনালাপের অডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর মাধ্যমে তৈরি নয়; এটি আসল এবং প্রযুক্তিগতভাবে তার প্রমাণ মিলে গেছে।
বুধবারের শুনানিতে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন। তবে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার শুনানি শেষে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রায় ঘোষণা করেন, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ এই মামলাকে ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বলে অভিহিত করেছে এবং পুরো বিচারপ্রক্রিয়া বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।