Bangladesh Student Murder : মুজিবের কবর ভাঙতে গিয়ে মার খেল ছাত্ররা, গোপালগঞ্জে হিংসার বলি ৩

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৬ জুলাই : বাংলাদেশে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা—উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোপালগঞ্জ, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন, হাসপাতালে ভর্তি আরও ৯ জন (Bangladesh Student Murder)। হিংসার জেলে গোপালগঞ্জে কার্ফু জারি করা হয়েছে।

বুধবার গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান সংলগ্ন এলাকায় একটি জনসভা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—একটি ছাত্রভিত্তিক বৈষম্যবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন। একই সঙ্গে তাঁরা শেখ মুজিবের সমাধি ভাঙার ডাকও দেয়, যা ঘিরে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই কর্মসূচিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অভিযোগ উঠেছে, এনসিপি-র সভামঞ্চে হামলা চালিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মারধর করে আওয়ামী সমর্থকরা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিরোধীরা দাবি করছে, শেখ হাসিনার ‘পতন’ উদযাপন করতেই এই কর্মসূচির আয়োজন হয়েছিল। তবে তা প্রতিহত করতে গিয়ে সহিংসতার রূপ নেয়। ঘটনাটি বাংলাদেশ জুড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশে আজ ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর প্রথম বর্ষপূর্তি। এই দিনটি ‘জুলাই শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করছে বিরোধী ছাত্র সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি, গত বছর এই সময় থেকেই শেখ হাসিনার পতনের সূচনা হয়েছিল। এই পটভূমিকায় এবছর ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে এনসিপি। ইতিমধ্যে দেশের একাধিক জেলায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রার আয়োজন করে দলটি।

‘জুলাই পদযাত্রা’কে ঘিরে আজ সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোপালগঞ্জ। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় এনসিপি কর্মীদের একটি অংশ পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় এবং সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রাকিবুল হাসান। তবে পরিস্থিতি তখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাড়ে ১১টার দিকে ইউএনও যখন কংশুর এলাকা দিয়ে ফিরছিলেন, তখন তাঁর গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। এতে তাঁর গাড়ির চালক আহত হন। এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন এনসিপি নেতারা ফের জনসভা করতে গেলে হামলার মুখে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় ২০০–৩০০ জনের একটি দল চারদিক থেকে ঘিরে তাঁদের এবং পুলিশের গাড়িগুলিকে আটকে দেয়। এনসিপির দাবি, হামলাকারীরা সবাই আওয়ামি লীগ সমর্থক। পরিকল্পিতভাবেই তাঁদের সভা বানচাল করার চেষ্টা করা হয়।

ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এনসিপির নেতা-কর্মীরা পাল্টা সংঘর্ষ এড়িয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যদিক দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। পরিস্থিতি অবনতির জেরে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান পুরো জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরে জানা যায়, সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও নয়জন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-কে জানান, বিকেলে তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। প্রত্যেকের শরীরেই গুলির চিহ্ন ছিল।