ডিজিটাল ডেস্ক ১১ই জুলাইঃ মাথায় মদের গ্লাস। বলিউডের সাম্প্রতিক একটি জনপ্রিয় গানের তালে এক মহিলার সঙ্গে কোমর দোলাচ্ছেন এক যুবক। একোনও হোটেল বা বারের ঘটনা নয়। ঘটনাটি বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের। আর মহিলার সঙ্গে কোমর দোলাচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা। যিনি বছর দশেক আগে ওই কলেজ থেকে পাশ করেছেন। ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছে। তৃণমূলকে তোপ দেগেছে সিপিএম ও বিজেপি। তবে রানা বিশ্বাস নামে ওই ছাত্রনেতার পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বক্তব্য,কলেজের ফেস্টে এরকম হয়েই থাকে(Belghoria College News)।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়েছে। অভিযুক্তদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যোগ পাওয়া গিয়েছে। এরপরই বিভিন্ন কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি ছাত্রদের গোপনাঙ্গ দেখাতে বাধ্য করেন। কোথাও আবার ছাত্রীকে দিয়ে TMCP নেতার মাথা টেপানোর ছবি সামনে এসেছে। এবার দেখা গেল, ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের ফেস্টে মাথায় মদের বোতল নিয়ে জনপ্রিয় হিন্দি গান ‘জামাল কুদু’-র তালে বেলি ড্যান্সারের সঙ্গে কোমর দোলাচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা রানা বিশ্বাস।
জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রনেতা বছর দশেক আগে এই কলেজ থেকে পাশ করেছেন। তাঁর মা কামারহাটি পৌরসভার একজন কাউন্সিলর। কলেজের ফেস্টে মহিলার সঙ্গে রানা বিশ্বাসের এই নাচ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য তথা তৃণমূল পরিচালিত কামারহাটির পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। বললেন, তিনি ওই নাচ দেখেছেন। তবে ওটা মদের গ্লাস ছিল কি না,তা তিনি জানেন না। তবে ওই নাচের মধ্যে ভুল কিছু দেখছেন না। বলেন,“কলেজ ফাংশনে এইরকম একটু নাচ-গান হয়েই থাকে। নাচ সবাই পছন্দ করে এবং মজা পায়। তবে আমি বেলি ড্যান্স বুঝি না। নাচতে দেখেছি এই ব্যাস। ওই নৃত্য হয়তো সঠিক। আপনার কাছে হয়তো বেঠিক।” কলেজ থেকে পাশ করার পরও ওই ছাত্রনেতা কী করে কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন? এই নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে গোপাল সাহা বলেন, এটা কলেজের অধ্যক্ষ বলতে পারবেন।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার এই নাচ নিয়ে কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও বিজেপি। এক সময় এই কলেজেরই ছাত্রনেতা ছিলেন সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে এই সব সংস্কৃতি ছিল না। মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে কোনও ছাত্রনেতাকে বেলি ড্যান্স করতে দেখিনি। এক সময় ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ কামারহাটি-বেলঘরিয়ার গর্ব ছিল। সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল। এখন তার অধঃপতন হয়েছে। এটাই পরিবর্তন। তবে ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”
আরও এক ধাপ এগিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব কলেজেই তৃণমূলের উঠতি নেতাদের ফুর্তির জায়গা হয়ে উঠেছে। ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ রাজ্যের মধ্যে একটি ঐতিহ্যশালী কলেজ। সেই কলেজেই তৃণমূলের ছাত্রনেতা মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে এক মহিলার সঙ্গে বেলি ড্যান্স করছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি ত্রিণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের মদতেই এইসব চলছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার এই নাচ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি বলেন, “তৃণমূল রাজ্যের কলেজগুলোকে বার বানিয়ে দিয়েছে। কলেজগুলোর সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কোনও কলেজে মনোজিৎ, কোনও কলেজে রানা বিশ্বাস। আবার আরজি কর হাস্পাতালে সন্দীপ ঘোষেদের বাড়-বাড়ন্ত হয়ে গিয়েছে। তাই রানা বিশ্বাসরা মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে কলেজের ফেস্টেতে বেলি ড্যান্স করছে।”
কলেজের ফেস্টে এমন নাচ ঘিরে বিতর্ক বাধতেই রানা বিশ্বাস বলেন,“গোপালকাকু বোধহয় ভিডিয়োটা দেখেননি। ওটা কলেজ ফেস্ট নয়। এটা একজনের এক বছরের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছিল। ওখানে অনেক ডান্স ট্রুপ ছিল। আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে নাচতে বলে। নাচলাম। আর গ্লাসের গায়ে কি লেখা ছিল, মদ রয়েছে। একটা বিয়েবাড়িতে কি নাচাও অপরাধ? ওটা কলেজের ব্যাকগ্রাউন্ডই নয়।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, যখন কলেজে ছিলেন, তখন ফেস্টে নাচতেন। এবারও কলেজের ফেস্টে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন বলে জানালেন। তাঁর কথায়, “যখন কলেজে পড়তাম, তখন ফেস্টে নাচতাম। এতে অপরাধ তো কিছু নেই। এবারও কলেজে সোশ্যালে নিমন্ত্রিত ছিলাম। গিয়েছিলাম কলেজে। বাচ্চারা নেচেছে। তাদের সামলেছি। কলেজের ফেস্টে তো ছাত্ররা নাচবেই। না হলে কি বুড়োরা নাচবে?”