ডিজিটাল ডেস্ক, ১৭ মে : বিকাশ ভবনের সামনে এখনও অবস্থান করছেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শনিবার তৃতীয় দিনে প্রবেশ করল। তাঁরা বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন এবং বিকেলে করুণাময়ী পর্যন্ত একটি মিছিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, রাস্তায় বসেই ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করার উদ্যোগও নিয়েছেন তাঁরা (Bikash Bhawan SSC Protest)।
বৃহস্পতিবার চাকরিহারাদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে, যার ফলে অনেকেই আহত ও রক্তাক্ত হয়েছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, শনিবার ওই শিক্ষকদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সল্টলেকে আসবে।
আন্দোলনকারীদের কয়েকজন তাদের রাস্তায় বসেই পাঠদান করবেন। এছাড়া, বিকেলে পুলিশের হাতে কলম ও চকোলেট তুলে দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে।
শনিবার ও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় বিকাশ ভবন বন্ধ থাকবে, ফলে আন্দোলনকারীরা এই দু’দিন বড় কোনও কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করেননি। তাঁদের মতে, শনিবার দুপুরের পর তাঁরা বিকাশ ভবন থেকে করুণাময়ী পর্যন্ত একটি মিছিল করবেন। যাঁরা পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তবে তাঁদের স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হয়েছে, অনেকেই আসবে। আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বসেই তাদের পাঠদান করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো আন্দোলনকারীদের মূল দাবি, তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে, তবে নতুন করে কোনো পরীক্ষায় তাঁরা বসতে রাজি নন। বৃহস্পতিবার এই দাবি নিয়ে তাঁরা বিকাশ ভবন ঘেরাও করেন এবং জানান, মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। সকাল থেকেই আন্দোলনের মধ্যে একাধিকবার উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বচসা হয়, এমনকি তাঁদের একাংশ বিকাশ ভবনের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন, পরে দড়ি দিয়ে সেই দরজা বাঁধা হয়। সন্ধ্যায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, অভিযোগ ওঠে বিকাশ ভবনের কর্মচারীরা ছুটির পরও বেরোতে পারছিলেন না। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়, যার ফলে অনেকে আহত হন, তবে তাঁরা অবস্থান তুলে নেননি।
এই ঘটনার পর শুক্রবার পুলিশের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, আন্দোলনকারীদের বহুবার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সরেননি, অনেক কর্মী ও আধিকারিক ভিতরে আটকে পড়েছিলেন। তাঁদের নিরাপদে বের করে আনতে পুলিশকে ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগপত্র বাতিল করে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। যাঁরা ‘দাগি’ নন (অর্থাৎ যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই), তাঁদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা সেই সময়ের জন্য বেতনও পাবেন। তবে ভবিষ্যতে আবার নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে তাঁদের। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বহু শিক্ষক বিক্ষোভে নেমেছেন। অন্য দিকে, যাঁরা ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের শুধু চাকরি নয়, বেতনও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁদের একাংশ বর্তমানে এসএসসি দফতরের সামনে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, যা চলেছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এসএসসি দফতরের ভিতরে কমিশনের ১২ জন কর্মচারী আটকে রয়েছেন এবং তাঁদের বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের দাবি, কমিশনের চেয়ারম্যানকে সামনে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং রিভিউ পিটিশনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে।
Comments are closed.