ডিজিটাল ডেস্ক, ২৩ জুলাই : গত জুন মাস থেকে গাজার ত্রাণ শিবিরগুলো দিনে গড়ে মাত্র ১১ মিনিটের জন্য খোলা থাকছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্য সংগ্রহ করতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। হালকা বেচাল দেখলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে গুলি। ফলে খাবার নিতে গিয়ে ত্রাণ শিবিরে নেমে আসছে চরম বিশৃঙ্খলা। হুড়োহুড়ি, পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা তো ঘটছেই, তার পাশাপাশি চলছে গুলিবর্ষণ। সব মিলিয়ে গাজার ত্রাণ শিবির রূপ নিচ্ছে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে (Child Death Gaza Camp)।
এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। অপুষ্টি ও অনাহারে শিশুদের মৃত্যুহার ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, গত তিন দিনেই গাজায় অনাহারে মারা গেছে ২১ শিশু।
রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত গাজার ত্রাণ শিবিরগুলোতে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজায় খাদ্যসংকট চরমে পৌঁছেছে। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ ন্যূনতম খাদ্য ও জীবনধারণের সামগ্রী থেকে বঞ্চিত। তাদের একমাত্র ভরসা ত্রাণ শিবির, কিন্তু সেখানেও ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনারা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার গাজা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে গাজা এমন মৃত্যু ও ধ্বংসের স্তরে পৌঁছেছে, যার কোনো তুলনা হয় না।”
এদিকে গাজার একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, গত তিন দিনে অপুষ্টি ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে ২১ জন শিশু। গাজার আল-শিফা মেডিক্যাল সেন্টারের ডিরেক্টর মোহম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে অপুষ্টি ও অনাহারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, এবং পরিস্থিতিকে তিনি ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ উঠছে, দিনের পর দিন ত্রাণ শিবিরে গেলেও অধিকাংশ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। অনেকেই আগের রাত থেকে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন, কিন্তু এরপরও তারা শূন্য হাতে ফিরছেন।僅 কিছু খাবারের জন্য নিজেদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে ত্রাণ শিবিরে ভিড় করছেন অসহায় গাজাবাসী।
গাজায় ত্রাণ বিতরণ করছে ইজরায়েল-সমর্থিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। তবে তাদের কার্যক্রম নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। এই সংস্থা চারটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ করছে, কিন্তু সেই এলাকায় প্যালেস্টিনীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফলে বাসিন্দাদেরকে কয়েক কিলোমিটার দূরের ত্রাণ শিবিরে যেতে হচ্ছে, যেখানে গিয়ে অনেকেই খালি হাতে ফিরে আসছেন। এদিকে, গত মার্চ থেকে ইজরায়েলের সেনারা গাজার উপরে কঠোর অবরোধ আরোপ করেছে, যার ফলে অন্য কোনো বেসরকারি ত্রাণ সংগঠন এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না। সম্প্রতি কিছু চাপের মুখে অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হলেও তাতে খাদ্য সংকট আর কাটছে না।