ডিজিটাল ডেস্ক ২৫শে জুলাইঃ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফাঁস। সোশাল মিডিয়ায় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদকে নিয়ে রীতিমতো ‘কুৎসা’ শুরু হয়েছে। এমন একটা সময়, যখন দিলীপ ঘোষ বিজেপির বর্তমান প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করছেন। ঠিক তখন, যখন দিলীপের জনপ্রিয়তা বঙ্গ বিজেপির অন্দরে কোনও এক গোষ্ঠীর প্রতিপত্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে(Dilip Ghosh)।
এত প্রশ্ন, কারণ, অনেকের মত, ভিডিওতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, তিনি অন্য কেউ নন, স্বয়ং বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, বঙ্গ বিজেপির এক সময়ের রাশ ধরে রাখা দিলীপ ঘোষ। ভিডিওতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কি সত্যিই দিলীপ ঘোষ? নাকি ভিডিও এআই নির্মিত? সত্যিটা কী? উত্তর জানতে আজকাল ডট ইন-এর পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছিল দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। যদিও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ফোনে পাওয়া যায়নি তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকেও।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বুঝতে হবে সাম্প্রতিক অতীতে দিলীপ ঘোষের কার্যকলাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল কারা? সেটা কোনওভাবেই তৃণমূল নয়। দিলীপবাবু লাগাতার নিজের দলের রাজ্য নেতৃত্বকেই নিশানা করছিলেন। রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের নেতৃত্বে বঙ্গ বিজেপি যে ক্রমশ অধোগতির দিকে যাচ্ছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। প্রশ্ন তুলছিলেন, উনিশের ১৮ আসন চব্বিশে এসে কীভাবে ১২-তে নেমে এল? কেন লাগাতার কমছে দলের জনসমর্থন? সেসব প্রশ্নের যোগ্য জবাব দিতে না পেরে পালটা দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করার চেষ্টাও হয়েছে দলের অন্দর থেকেই।
একে একে দলের সব পদ থেকে সরানো হয়েছে তাঁকে। তাঁর ঘনিষ্ঠদেরও কোনও না কোনও ভাবে বিজেপির মূলধারা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের আসন মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে ভোটের মাসখানেক আগে হঠাৎ প্রার্থী করে দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুরে। ভোটে হারার পর সংগঠনের কোনও কাজেই রাখা হয়নি। এমনকী দলীয় কোনও বৈঠকে ডাকা হত না। তিনি জেলায় কোনও কর্মসূচি করলে কর্মীদের সহযোগিতা করতে বারণ করা হত। এ সবটাই করা হয়েছে ধারাবাহিক পরিকল্পনা মাফিক। উদ্দেশ্য একটাই, দলের অন্দরের বিরোধী স্বর দমন করা। যাতে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে এমন কেউ না থাকেন, যে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। দিলীপ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই গোষ্ঠীই রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরার পর দিলীপকে কোণঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এরাই শেষ মুহূর্তে লোকসভায় দিলীপের আসন ব্যবহার করে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। আবার দিলীপবাবু যখন বিয়ে করলেন তখন এদের অঙ্গুলিহেলনেই তাঁকে জড়িয়ে রসালো সব কটাক্ষ সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছিল। ‘ভুয়ো’ ভিডিও ছড়িয়ে দিলীপকে বদনাম করার চেষ্টার নেপথ্যের মেঘনাদও সম্ভবত এরাই।
বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি শমীক যেদিন সংবর্ধিত হলেন দলের তরফ থেকে,ডাক পাননি দিলীপ। এমনকি রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়াতেই দিলীপের কোনও ভূমিকা ছিল না। একাধিক সংবাদ মাধ্যমে দিলীপ বলেছিলেন, তাঁকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আলাদা করে কিছু বলা হয়নি। মোদি বঙ্গে এলেন। সেই সভাতেও ডাক পেলেন না দিলীপ। একাধিক ঘটনার পর,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেছিলেন, দিলীপকে সংগত কারণেই নাকি দূরে রাখছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু দিলীপ বর্তমানকালে আগের মতো অহরহ বিতর্কিত মন্তব্যও করেন না। তাহলে কি বঙ্গ বিজেপিতে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে? দিলীপ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলেও মাঝে রটিয়ে দিয়েছিলেন কেউ কেউ।
সেসব না হয় রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু এবার আঘাত একেবারে ব্যক্তিগত জীবনে। একেবারে ব্যক্তিগত ভিডিও বলে ভাইরাল করা হল একটি ভিডিও, অনেকেই বলছেন ভিডিও দিলীপের। তাতেই কুৎসা, কটাক্ষ আর প্রয়োজনের প্রশ্ন জোরাল হচ্ছে আরও।