ডিজিটাল ডেস্ক, ৮ জুলাই : বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদে শমীক ভট্টাচার্যের নিযুক্তির পর তাঁর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh Meet Samik Bhattacharya)। সেখানেই ব্যঙ্গ-রসিকতার ছোঁয়ায় বলেন, “মার্কেটে যার দাম থাকে, তাকেই নিয়ে বেশি চর্চা হয়।” সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে উদ্দেশ্য করে আরও যোগ করেন, “আমার মধ্যে কোনও ভেজাল নেই, তাই এত দাম।”
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের ‘দলবদল’ ঘিরে চলছিল জোর চর্চা। গুঞ্জন এমনই ছিল যে, বঙ্গ গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন—এমনকি ২১ জুলাইয়ের তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির সম্ভাবনাও ঘোরাফেরা করছিল রাজনৈতিক মহলে। এই সমস্ত জল্পনার মাঝেই মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন দিলীপ। এরপর সাংবাদিকদের সামনে এসে নিজের বক্তব্যে বিতর্কের অবসান ঘটান তিনি।
দিলীপ ঘোষ বলেন, “বাজারে যার দাম থাকে, তাঁর সেল নিয়ে কথা হয়। যাদের কোনো দাম নেই, তাঁদের তো কেউ কেনেই না—তাঁরা রাস্তায় পড়ে থাকে। দিলীপ ঘোষের দাম আছে, থাকবে। আমি কোনো সেলেবেল নই।” এই মন্তব্যের পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের প্রশংসাও করেন তিনি। স্মৃতিচারণ করে বলেন, “দলে যোগ দেওয়ার সময় শমীকদা আমার সিনিয়র ছিলেন। এক সময়ে তাঁর দেখানো পথেই চলেছি। নতুন-পুরনো সকল কর্মীর সম্মিলিত পরিশ্রমেই আজকের এই অবস্থানে এসেছে দল। লড়াই চলবে।”
দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণের সময়ই শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন—বিজেপির আদি এবং নব্য, উভয় অংশকেই সঙ্গে নিয়েই তিনি এগোতে চান। এমনকি ১৫ দিনের মধ্যেই দলে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশ্বাসও দেন তিনি। তবে এদিকে, গত কিছু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে, ২১ জুলাই তৃণমূলের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে যখন রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো চলেছে, দিলীপ সরাসরি কিছু বলেননি—তবে ‘না’-ও বলেননি। আর তাতেই জনমানসে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে কৌতূহল আরও বেড়েছে।
শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর দলীয় সম্পর্ক নিয়ে চলা জল্পনায় কার্যত ইতি টানলেন দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিকদের সামনে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “দলে কোনও ভেদাভেদ ছিল না। আমি রাজ্য স্তরে কোনও পদে নেই, তাই সব জায়গায় আমন্ত্রণ আসবে—এমন কথা নেই। আমি বর্তমানে জেলার দায়িত্বে রয়েছি এবং সেখানে সংগঠনের কাজ করছি।” তাঁকে ঘিরে চলা জল্পনার অন্যতম কারণ ছিল দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে যোগ দেওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ—যা দলের অবস্থানের সঙ্গে খাপ খায়নি। তবে এই বিষয়গুলোকে তেমন গুরুত্ব দেননি দিলীপ। বরং শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এদিনের আলোচনার পর রাজনৈতিক মহলে ধরনা—দলের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ হয়তো আপাতত কিছুটা প্রশমিত হল।