Election Commission Announcement : বড় ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের! ১৯৮৭-র ১ জুলাইয়ের পরে জন্মানো কাউকে দিতে হবে না বাড়তি নথি
ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ জুন : বিহারে চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল ভোটার তালিকার একটি বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (Special Intensive Revision) করা হবে। তবে এই পদক্ষেপ ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, বাংলায় প্রয়োগের আগে কি এর একটি ‘টেস্ট ড্রাইভ’ চালানো হচ্ছে? তাঁর আশঙ্কা ছিল, এই প্রক্রিয়া আদতে এনআরসি চালুর পথে এক পরোক্ষ পদক্ষেপ। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের অবস্থানে বদল আসে। নির্বাচন কমিশন সোমবার এই নিয়ে নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে আগের নির্দেশিকা সংশোধন করা হয়েছে (Election Commission Announcement)।
২০০৩ সালের বিহারের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ৪.৯৬ কোটি ভোটারের তথ্য রয়েছে। এই তালিকায় নাম থাকলে নতুন করে কোনও নথিপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি ভোটারদের পরিচয় প্রমাণের জন্য বাবা বা মায়ের আলাদা নথিও প্রয়োজন হবে না। যদি কারও নাম ২০০৩ সালের তালিকায় না থাকে, সে ক্ষেত্রেও তিনি নিজের বাবা বা মায়ের অন্য নথির বদলে ওই পুরনো ভোটার তালিকাই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটারকে কোনও নথিপত্র জমা না দিয়েই শুধু তালিকাভুক্ত তথ্য যাচাই করে আবেদন ফর্ম জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের পূর্বের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, যাঁদের জন্ম ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ২ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যে হয়েছে, তাঁদেরকে নিজের জন্মতারিখ বা জন্মস্থান প্রমাণের জন্য একটি নথি এবং তাঁদের বাবা-মায়ের জন্মতারিখ বা জন্মস্থান সম্পর্কিত একটি নথি জমা দিতে হতো। তবে যাঁদের জন্ম ২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে, তাঁদের জন্য নিজের জন্ম সংক্রান্ত একটি প্রমাণপত্র ছাড়াও বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কিত নথি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আর যদি কোনও ভোটারের বাবা বা মা ভারতীয় নাগরিক না হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের পাসপোর্ট ও সন্তানের জন্মের সময়কার ভিসার কপিও জমা দিতে হতো।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে অবৈধ ভোটারদের সরিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই চলছে সংশোধনের প্রক্রিয়া। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে একটি ‘ঘোষণাপত্র ফর্ম’ (ডিক্লারেশন ফর্ম)। তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে উঠেছে বিরোধিতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্র বাংলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে চাইছে। তাঁর মতে, এমন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তিনি স্পষ্ট বলেন, “নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পরামর্শ না করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে। এখানে নির্বাচিত সরকার বা রাজনৈতিক দল কারও অনুগত নয়।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারকে একটি ডিক্লারেশন ফর্ম পাঠিয়েছে। তবে ফর্মটির কিছু নিয়ম নিয়ে তিনি গুরুতর আপত্তি তুলেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন শুধু ১৯৮৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের এই ফর্মে তথ্য দিতে বলা হচ্ছে? তাহলে তার আগে ও পরে জন্মগ্রহণকারীদের কী হবে?” তাঁর আশঙ্কা, এই ধরনের শর্ত দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “গরিব মানুষের পক্ষে বাবা-মায়ের জন্মসংক্রান্ত শংসাপত্র জোগাড় করা দুরূহ। এই নিয়ম আসলে এনআরসির পথ প্রশস্ত করছে কি না, সেটাই ভাববার বিষয়।”
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ইস্যুতে সবচেয়ে আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “মমতাদিই প্রথম এই বিষয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই কমিশনকে আগের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশ জারি করতে বাধ্য হতে হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তিনি বারবার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাঁর আন্দোলনের ফলেই একসময় সারা দেশ সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পেয়েছিল, এবং সেই লড়াই আজও অব্যাহত।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, বর্তমানে বিহারে ভোটার সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৮ কোটিতে। শেষবার যখন নিবিড় সমীক্ষা হয়েছিল, তখন সেই সংখ্যা ছিল ৪.৯৬ কোটি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০০৩ সালের তালিকায় থাকা ওই ৪.৯৬ কোটি ভোটারের সমস্ত নথি-বিবরণ সঠিকভাবে মিলে গেছে। ফলে, তাঁদের নতুন করে আর কোনও নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।