Europe Heat Wave : পুড়ছে ইউরোপ! ফ্রান্সে বন্ধ ১৯০০ স্কুল, ইটালির ১৭ শহরে সতর্কতা জারি

10

ডিজিটাল ডেস্ক, ২ জুলাই : চরম গরমে নাকাল ইউরোপের একাধিক দেশ (Europe Heat Wave)। ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন—এই দেশগুলির নাগরিকরা মনে করতে পারছেন না, শেষ কবে এমন অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় এত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সাম্প্রতিক ক’দিনে তাপপ্রবাহের তীব্রতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের। ফ্রান্সে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, আর প্রশাসনের তরফে পর্যটকদের বলা হচ্ছে যেন আইফেল টাওয়ারের মতো জনপ্রিয় জায়গায় না যান। ইটালির রোম ও মিলান-সহ ১৭টি এলাকায় জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। অন্যদিকে, তুরস্কের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক—সেখানে দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে দমকল। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ এক ‘ব্যতিক্রমী’ তাপপ্রবাহ যা বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর অস্বাভাবিক রূপেরই আরেকটি দৃষ্টান্ত।

ইউরোপের গ্রীষ্ম যেন রেকর্ড গরম নিয়েই হাজির! গ্রীষ্মের শুরুতেই চরম গরমে হাঁসফাঁস গোটা ইউরোপ। কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি, কোথাও ৪৬, আবার কিছু জায়গায় তো ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যাওয়ার পথে! আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এমন দ্রুত উষ্ণতার উল্লম্ফন আগে কখনও দেখা যায়নি—রীতিমতো নজিরবিহীন বলেই মত তাঁদের। গরমের এই রেকর্ডভাঙা প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনেরই আরেকটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ হারে উষ্ণতা বাড়ছে ইউরোপে। এমন প্রবণতা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই বেড়ে চলেছে তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যুর সংখ্যা। সবচেয়ে বিপর্যস্ত ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইটালি, গ্রিস ও সুইৎজ়ারল্যান্ড—এই দেশগুলিতে তাপপ্রবাহ হয়ে উঠেছে কার্যত প্রাণঘাতী। সত্যি, উত্তর গোলার্ধে এই সময় তাপপ্রবাহ নতুন নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের গরমের ঊর্ধ্বগতির এমন ভয়াবহতা এবং ব্যাপ্তি আগে দেখা যায়নি।

ফ্রান্সে তাপপ্রবাহের তাণ্ডব চলছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা!মঙ্গলবার দেশের একাধিক অঞ্চলে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪০–৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বুধবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ইতিমধ্যে ১৯০০-র বেশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর প্রতিদিনই বাড়ছে সেই সংখ্যা। দেশের ১৬টি এলাকায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।

ইটালিতে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ, রেকর্ড গরমে অচল জনজীবন! মিলান, রোম-সহ দেশের ১৭টি অঞ্চলে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। প্রশাসন দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে ঘরের বাইরে না বেরনোর নির্দেশ দিয়েছে নাগরিকদের। কয়েকটি এলাকায় বাহিরে কাজ করাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না-হওয়া পর্যন্ত এই সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞাগুলি বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। বোলোনা শহরে অতিরিক্ত গরমে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে—চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তীব্র উষ্ণতাই মৃত্যুর মূল কারণ। বিদ্যুৎবিভ্রাটের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, যার ফলে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।

স্পেনে প্রখর দাবদাহ, ইতিহাসে নজিরবিহীন তাপমাত্রা! দক্ষিণ-পশ্চিম স্পেনের লা গ্রানাদো শহরে রবিবার তাপমাত্রা ছুঁয়েছে রেকর্ড ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস! গত ছয় দশকে এত গরম আগে কখনও পড়েনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। স্পেনের সরকারি আবহাওয়া সংস্থা AEMET জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে তাপপ্রবাহ থেকে কোনও মুক্তি মিলবে না বলেই আশঙ্কা। জুন মাসে এমন তীব্র গরম এই প্রথম—AEMET-এর মতে, এটি স্পেনের ইতিহাসে ‘উষ্ণতম জুন’। ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া দফতর। সাধারণ মানুষকে রোদ চড়ার সময় রাস্তায় না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছে স্পেন সরকার।

পর্তুগালে গরমের তীব্রতা চরমে পৌঁছেছে! মঙ্গলবার লিসবন থেকে প্রায় ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত মোরা শহরে তাপমাত্রা পৌঁছেছে রেকর্ড ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে—জানিয়েছে পর্তুগালের আবহাওয়া বিভাগ (IPMA)। রাজধানী লিসবনেও তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির আশেপাশে থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ নেই বলে জানিয়েছে IPMA। এই চরম গরম জনজীবনে যে বড়সড় প্রভাব ফেলছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দাবানলে জর্জরিত গ্রিস ও তুরস্ক, তাপপ্রবাহে পরিস্থিতি আরও জটিল! গ্রিস ও তুরস্ক—উভয় দেশেই গরমের প্রখরতার পাশাপাশি দাউদাউ দাবানলের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই চলছে। গ্রিসের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা পৌঁছে গেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দক্ষিণ আথেন্সে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়েছে, পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বহু বাসিন্দাকে ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কেও একই ছবি—চরম গরম এবং দাবানলের যৌথ আক্রমণে সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এই ধরনের জলবায়ু ঘটনা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এক গভীর বৈজ্ঞানিক সংকেত—জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রমাণ।

ব্রিটেনে গরমের রেশ, ইউরোপের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয়! ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যে আবহাওয়ার অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকলেও, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে কয়েক জায়গায়। এ সময় চলছে ঐতিহ্যবাহী উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্ট—বিশ্বজোড়া তারকা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে আসর। কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারণে খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। ব্রিটেনের মতো আবহাওয়ায় এমন গরম বিরল—জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব যে নিছক অস্বস্তিকরই নয়, বরং চিন্তার বিষয়, সেটাই যেন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে এই গ্রীষ্ম।