GAZA Famine : দুর্ভিক্ষ, অনাহার! অপুষ্টির বলি অন্তত ৬৬ শিশু, ইজরায়েলের লাল চোখের কারণে একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার!
ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ জুন : চলমান ইসরায়েলি অবরোধ ও হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অন্তত ৬৬ শিশু অপুষ্টিতে মারা গিয়েছে বলে গাজার সরকারি সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা ঢুকতে না দেওয়াই এই সংকটের প্রধান কারণ (GAZA Famine)।
গাজা কর্তৃপক্ষ এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য শুধু ইসরায়েলকেই নয়, বরং তার পশ্চিমা মিত্রদের— বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিকেও দায়ী করেছে। একইসঙ্গে, জাতিসংঘকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন অবিলম্বে গাজার সব সীমান্তপথ খুলে দেওয়া হয়। গাজ়া জুড়ে খাবারের জন্য হাহাকার বেড়েই চলেছে। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন গাজ়াবাসী। অভিযোগ, ইজ়রায়েলের ‘অবরোধ’ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। খাবার নেই, ওষুধ নেই, প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব। সেই কারণেই অপুষ্টির শিকার হচ্ছে গাজ়ার শিশুরা। গাজ়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুধু অপুষ্টিতেই অন্তত ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে! অপুষ্টির সঙ্গে ইজ়রায়েলি সেনার হামলাতেও তটস্থ গাজ়াবাসী।
শনিবার গাজ়ার সরকারি জনসংযোগ দফতরের থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে ইজ়রায়েল এবং তাদের সমর্থিত দেশগুলির তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে বাধা দেওয়াকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলেও বর্ণনা করেছেন গাজ়া কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, গাজ়ার সাধারণ মানুষকে শেষ করতে ইজ়রায়েল ইচ্ছাকৃত ভাবে অনাহারকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে!
অনাহার, রোগ এবং খেতে না পেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর শিকার হওয়া শিশুদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের ‘নীরবতা’কেও নিন্দা করেছে গাজ়া প্রশাসন। তাদের দাবি, গাজ়ায় শৈশবকে শেষ করতে চায় ইজ়রায়েল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই বিপর্যয়ের’ জন্য শুধু ইজ়রায়েল নয়, দায়ী তার বন্ধু আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশগুলিও। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ এবং অবিলম্বে গাজ়ায় ইজ়রায়েলি ‘অবরোধ’ তুলে দিয়ে প্রবেশের পথ প্রশস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ দিন দুয়েক আগেই গাজ়ায় অপুষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের বিষয় নিয়ে সতর্ক করেছিল। তারা জানায়, গাজ়ায় অপুষ্টির শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা ‘উদ্বেগজনক হারে’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইউনিসেফ। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র মে মাসেই কমপক্ষে ৫,১১৯ জন শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ওই শিশুদের বয়স ছ’মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে! এপ্রিল মাসের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি শিশু মে মাসে গাজ়ায় অপুষ্টির শিকার হয়েছে। মার্চ মাস থেকে গাজ়া অবরোধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলি সেনা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহকারী ট্রাককে। তার জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি গাজ়াবাসী।
এর কয়েক দিন আগেই জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছিল, গাজা উপত্যকায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, কেবল মে মাসেই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী অন্তত ৫ হাজার ১১৯ শিশুকে তীব্র অপুষ্টিজনিত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এই সংখ্যা এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি (এপ্রিলের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪৪) এবং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিরতি যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকায় উপত্যকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করছিল।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেইগবেদার বলেন, ‘এই বছরের শুরু থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫০ দিনে ১৬ হাজার ৭৩৬ শিশুকে অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। সেই হিসাবে অপুষ্টিজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে গড়ে প্রতিদিন ১১২ জন শিশু।