ডিজিটাল ডেস্ক, ১২ মে : দফায় দফায় আলোচনা শেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধের উত্তেজনা কমতে শুরু করেছে। আপাতত ৯০ দিনের জন্য, দুই দেশ একে অপরের পণ্যের উপর শুল্কের হার ১১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে (Geneva Meet USA China Tariff)। গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকের পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন শুল্কসংক্রান্ত বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার মার্কিন রাজস্বসচিব স্কট বেসান্ত জানিয়েছেন যে, দুই দেশই ৯০ দিনের জন্য ১১৫ শতাংশ শুল্ক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আমেরিকা ও চীনের শুল্ক নিয়ে তিন মাসের ‘যুদ্ধবিরতি’ সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমানে চিনা বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর ১০ শতাংশ এবং আমেরিকার বাজারে চীনা পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি শুল্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে চীনের সঙ্গে।
শুল্কযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ ফেন্টানাইলকে কেন্দ্র করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে, নিষিদ্ধ এই ওষুধটি চীন থেকে আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করছে। এর পরেই তিনি কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভারত-সহ আরও কয়েকটি দেশের উপরও শুল্ক বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। চীনা পণ্যের উপরেও শুল্ক হার বাড়ানো হয়। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয় বেইজিং। তারা মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একে অন্যের বিরুদ্ধে দফায় দফায় শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে চলতে থাকে বাণিজ্যিক সংঘাত।
অন্য দেশগুলির উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখলেও, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়নি। ফেন্টানাইল-বিতর্কের জেরে চলতি বছরের শুরুতেই আমেরিকা চীনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপায়। পরে অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক বৃদ্ধির সময়, চীনের পণ্যের উপর আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানালে, ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা করেন। সেই প্রতিক্রিয়ায় চীনও মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে দেয়। এইভাবে দফায় দফায় শুল্ক বৃদ্ধির ফলে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার বাজারে চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, আর চীনা বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে।
আমেরিকার শেয়ার বাজারেও শুল্কযুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। মার্কিন বাণিজ্য এবং শুল্কনীতির বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে, গত মাসের শেষ দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, আমেরিকা চিনা পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ ‘অনেকটাই কমাতে’ পারে, যদিও তা কখনওই শূন্য হবে না বলে তিনি স্পষ্ট করেন। এই আবহে, গত শনিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্তারা বৈঠকে বসেন, যা রবিবারও চলতে থাকে। অবশেষে, সেই বৈঠকের পর আমেরিকা এবং চিন শুল্কযুদ্ধে সাময়িক বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
Comments are closed.