High Court On 21st July : ২১ জুলাই সকাল ৯টা-১১টা পর্যন্ত মধ্য কলকাতায় যেন যানজট না-হয়! পুলিশকে বার্তা হাইকোর্টের

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৮ জুলাই : ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিকে ঘিরে শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সকাল ৮টা পর্যন্ত মিছিল করা যাবে। সকাল ৯টার মধ্যে যেখানেই মিছিল অবস্থান করবে, সেখানেই থামিয়ে দিতে হবে – অর্থাৎ মিছিল থেমে যেতে হবে। পুলিশকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে শহরের কোথাও যেন যানজট না হয় (High Court On 21st July)। বিশেষ করে কলকাতা হাই কোর্টের পথ, সেন্ট্রাল কলকাতা এবং তার আশপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকা যেন যানজটমুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশ কমিশনারের ওপরেই পড়েছে।

আসন্ন ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হতে পারে – এমন আশঙ্কা থেকেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বামপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন। সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার কড়া পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।

সভা আয়োজনের অনুমতিতে আপত্তি না থাকলেও, বিচারপতি শহরবাসীর দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “জনগণ কতক্ষণ এ সব সহ্য করবে?”

বিচারপতির এই মন্তব্য কার্যত রাজ্য প্রশাসনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল (AG) শুনানিতে দাবি করেন, “সমস্ত নিয়ম মেনেই সভার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সফরের সময়ও এমন ট্র্যাফিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তৃণমূলের এই সভা তো প্রায় তিন দশক ধরেই হয়ে আসছে।”

তবু আদালত রাজ্যের যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পাল্টা মন্তব্য করেন, “তাহলে কি কলকাতার পুলিশ কমিশনার লিখিতভাবে মুচলেকা দেবেন যে, কোথাও কোনও যানজট হবে না? মানুষ কতটা সহ্য করবে, সেটাও তো ভাবতে হবে।”

মামলাকারী আইনজীবী শামিম আহমেদের পক্ষ থেকে আদালতে একটি হলফনামা পেশ করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজ স্কোয়ার থেকে ডরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে পুলিশের ভূমিকা এবং শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার হাল কী ছিল। জানানো হয়, ট্র্যাফিক পুলিশ বহু গাড়িকে ঘুরিয়ে দেয়। কেসি দাস থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, যেখানে পুলিশ নিজেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কোনও সভা-সমাবেশ করা যাবে না।

হলফনামায় আরও উল্লেখ, ওইদিন পার্ক সার্কাস স্কুল ও ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি জানতে চান, ২১ জুলাইয়ের জন্য পুলিশের কাছ থেকে আদৌ কোনও অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না। জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

তবে মামলাকারীদের সংগঠনের আইনি বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। ফলে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আদালতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

শুনানিতে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, “আসন্ন জমায়েতে কত মানুষ উপস্থিত হবেন? গাড়ি, ট্রাম, বাস—সব কোথা দিয়ে চলবে? উত্তর কলকাতা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাবে। যদি ১০ লক্ষ মানুষ জড়ো হন, তখন শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা কীভাবে চলবে, সেটা তো ভাবতেই হবে।”

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, হাই কোর্ট কোনওভাবেই সমাবেশ বন্ধ করার পক্ষপাতী নয়। তবে প্রশ্ন তোলেন, “সাধারণ মানুষ জানবেন কীভাবে তারা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছবেন?” — শহরের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখার প্রশ্নেই আদালতের এই উদ্বেগ।

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র প্রচারের আলো পেতেই এমন মামলা করা হয়েছে। দলটির বক্তব্য, এটি আদৌ জনস্বার্থ মামলা নয়। বরং জনস্বার্থের আড়ালে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা। তাঁদের দাবি, অতীতেও ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে শহরে যাতায়াতে কোনও সাধারণ মানুষ বাধা পেয়েছেন বা আহত হয়েছেন—এমন প্রমাণ মামলাকারী দেখাতে পারেননি।

তবে শুনানিতে বিচারপতি স্পষ্ট করেন, যদি ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে কোথাও সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়, তবে তার দায়ভার নিতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কলকাতার ধর্মতলা চত্বর ইতিমধ্যেই বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে, তাই প্রস্তুতির বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে।

মামলাকারীর অভিযোগ, “পুলিশ যেখানে ১০ লক্ষ মানুষের জমায়েতের অনুমতি দিচ্ছে, সেখানে ২০০ জনের মিছিল করতে দিলেই বলে ট্রাফিকে সমস্যা হবে। পুলিশের এই দ্বিচারিতা কেন? অন্য সময় ছোট জমায়েতেও অনুমতি দেয় না, অথচ এখন আগেভাগেই অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এই সমাবেশের বিরুদ্ধে নই। তবে আদালতের কাছে আমার আবেদন, সোমবার যেন সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে তাঁদের কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন, আদালতেও যেন পৌঁছানো যায়। এটা যেন একটি কাজের দিন হয়, প্রতিবন্ধকতার দিন না হয়।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, মামলাকারী জানান, সিধু কানু ডহর কলেজের একটি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সমাবেশের কারণে—যা পরিস্থিতির জটিলতাকেই তুলে ধরে।