India Pakistan Cease Fire : কোন কোন দেশ ভূমিকা নিল ভারত-পাক যুদ্ধবিরতিতে

7

ডিজিটাল ডেস্ক, ১১ মে : চার দিন ধরে চলা সংঘর্ষের পর অবশেষে ভারত এবং পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। শনিবার বিকেল ৫টা থেকে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হয়। প্রথমে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘোষণা করেন, পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

এই বোঝাপড়ার পেছনে আমেরিকা-সহ একাধিক দেশের ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ কৃতিত্ব ট্রাম্প নিজেই দাবি করেন। রাতে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, কারণ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে আবারও পাক সেনার গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে সংঘর্ষবিরতির পর রবিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি মোটের উপর শান্ত। রাতে নতুন করে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি এবং নতুন কোনও ড্রোন হামলার খবরও পাওয়া যায়নি।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। আমেরিকা বারবার ভারত ও পাকিস্তানকে উত্তেজনা প্রশমন এবং কূটনৈতিক আলোচনার পথে এগোতে উৎসাহিত করলেও তাতে তেমন সুফল মেলেনি।

ভারত নিজের অবস্থানে অটল ছিল এবং জানিয়ে দেয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। ভারতীয় পক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতি এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
পাকিস্তান শুরু থেকেই পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে কোনও যোগসূত্র অস্বীকার করে আসছে। তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ফলে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, ধর্মীয় স্থানে ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। তারা দাবি করেছে যে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রত্যাঘাত করতে বাধ্য হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা আঘাত-প্রত্যাঘাতের পর শুক্রবার রাতে পাকিস্তান আলোচনার পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছিল। সেই অনুযায়ী মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর সঙ্গে পাক কর্তৃপক্ষের কথাবার্তা হয়। যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলত, তাহলে শনিবার সকালে দুই দেশ আলোচনার টেবিলে বসতে পারত।

তবে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায় যখন শনিবার ভোরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আঘাত করে। এরপর দ্রুত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মিসাইল হামলার পর পাল্টা প্রত্যাঘাত শুরু করে পাকিস্তান, ফলে কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা ভেস্তে যায়। ভোর থেকে পুঞ্চ, রাজৌরী, পঠানকোটের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক মিসাইল ও ড্রোন হামলায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। চারদিকে সাইরেন বেজে ওঠে, আর ভারতও পাল্টা গোলাবর্ষণ করে।

এই পরিস্থিতি শান্ত করতে আমেরিকা সক্রিয় হয়। মার্কো রুবিয়ো প্রথমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা বলেন, পরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ দু’ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স, রুবিয়ো এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি ফোন করে জানানো হয় যে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা প্রয়োজন। এরপরই ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওদের মধ্যে ফোনে আলোচনা হয় এবং সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই সমঝোতা মূলত শেষ দু’ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়।

পাকিস্তানের এক মন্ত্রী দাবি করেছেন, ভারত-পাকিস্তানের এই সমঝোতার পেছনে প্রায় তিন ডজন দেশের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, আমেরিকার পাশাপাশি সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, চিন, রাশিয়া, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতারও এই তালিকায় রয়েছে (India Pakistan Cease Fire)।
কিছুদিন আগে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী দুই দেশকে সমঝোতার বার্তা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রীও, পরে তাঁর সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কথা হয়।

সৌদির বিদেশ দফতরের মন্ত্রী কোনো পূর্বনির্ধারিত সূচি ছাড়াই ভারতে এসে জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন, এরপর তিনি পাকিস্তানে যান।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতার থেকেও যোগাযোগ করা হয়, পাশাপাশি সম্প্রতি ইটালির বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও জয়শঙ্করের আলোচনা হয়।
পহেলগাঁও হামলার পরপরই ইরানের প্রেসিডেন্ট মোদী ও শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। বিভিন্ন দেশের উৎসাহ এবং শান্তির বার্তাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই সমঝোতা সম্ভব করেছে।

Comments are closed.