ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ এপ্রিল: সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করল ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানকে ‘অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য’ বা রোগ স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করে তীব্র আক্রমণ শানান ভারতের প্রতিনিধি।
ভারতীয় দূত যোজনা পটেল জানান, ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হানাতেই সবচেয়ে বেশি নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর বিশ্বজুড়ে বহু দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং ভারতকে যে সংহতির বার্তা পাঠিয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এই বক্তব্যে আবারও আন্তর্জাতিক পরিসরে সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল ভারত।
পহেলগাঁও জঙ্গিহানায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে ভারত। যদিও পাকিস্তান সেই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করেছে আমেরিকাসহ একাধিক দেশ। তবে ভারত যে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছে, সেই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা বা কোনও তৃতীয় পক্ষ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেনি। জঙ্গিহানার ঘটনার নিন্দা হলেও, আন্তর্জাতিক স্তরে কেউই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ফের রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে পাকিস্তানকে নিশানা করে সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগে কড়া অবস্থান নিল ভারত।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ভিক্টিম্স অফ টেররিস্ট অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্ক’ (VOTAN) গঠনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তৃতা দেন ভারতের প্রতিনিধি যোজনা পটেল। সেখানে তিনি বলেন, ভারত নিজেও ‘ভিনদেশ-প্রসূত সন্ত্রাস’-এর শিকার। এই প্রসঙ্গে তিনি পহেলগাঁও জঙ্গিহানার উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপুঞ্জে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফের সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টানেন ভারতের প্রতিনিধি যোজনা পটেল। তিনি বলেন, ওই সাক্ষাৎকারে খোয়াজা আসিফ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আসলে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের ভূমিকাকে একটি ‘খোলা স্বীকারোক্তি’র রূপে তুলে ধরে।
পটেল জানান, “পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করেছেন যে, তাদের দেশ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা এবং সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। গোটা বিশ্ব সেই বক্তব্য শুনেছে। এটা নতুন কিছু নয়—পাকিস্তান যে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসে ইন্ধন জোগায় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে, তা আর ঢাকতে পারছে না। এই স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে, পাকিস্তান এখন এক অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।”
রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের দূত আরও বলেন, “এত দিনের পরিসংখ্যান, প্রমাণ এবং এমন প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির পর বিশ্ব আর এই বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে না।”
প্রসঙ্গত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরও অবনতি হতেই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তিও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত পথ। এছাড়া, পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত প্রতিরক্ষা দপ্তরের কিছু আধিকারিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ভারত, এবং তাঁদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর পরদিন, বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর ভারতকে পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তান। তারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেয়, ভারতের পক্ষ থেকে যদি জলপ্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটিকে তারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র সমতুল্য বলে গণ্য করবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান দাবি করে, তারাও চাইলে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করার অধিকার রাখে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই শিমলা চুক্তির মাধ্যমেই কাশ্মীর উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি নির্ধারিত হয়েছিল।
Comments are closed.