ডিজিটাল ডেস্ক, ২৩শে জুলাই : কসবায় আইন কলেজে আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিতের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অন্তত বারোটি মামলা। মারপিট, গোলমাল ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে এমনই জানালেন এই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে হেফাজতে রেখে বিচারপর্ব বা ‘কাস্টডি ট্রায়াল’শুরু হবে। বিচারক তখন পুলিশকে প্রশ্ন করেন, ২০২৩ সাল থেকে এতগুলি মামলা চললেও মনোজিতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি? জবাবে সরকারি আইনজীবী জানান,অভিযুক্তরা সবাই একসাথে চলাফেরা করত এবং প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ কোনও কড়া পদক্ষেপ নেয়নি (Kasba Rape Update)।
এই দিন কসবা থানার আরও দুটি পুরনো মামলায় মনোজিৎকে ফের গ্রেফতার করা হয়। একটি ২০২৩ সালের মারধরের মামলা,আরেকটি ২০২৪ সালের সংঘর্ষের মামলা। তবে এই দুই মামলায় আগেই চার্জশিট জমা পড়ায় আদালত তাঁকে জামিন দেন। এদিন কসবা থানায় দায়ের হওয়া আরও দুটি মামলায় মনোজিৎ মিশ্রকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ২০২৩ সালের ঘটনাটির সময় মনোজিৎ আলিপুর আদালতেই একটি মামলা করছিলেন। প্রত্যেকটি মামলাই রাজনৈতিক সংঘর্ষের। মনোজিৎ রাজনীতির শিকার। যদিও এই দুটি মামলায় আগেই পুলিশ চার্জশিট পেশ করেছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলায় জেল হেফাজতে চাওয়া হলেও এই দু’টি মামলায় জামিন পেয়ে যায় মনোজিৎ। অন্য সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল আদালতে জানান, বুধবার অভিযুক্তদের ‘গেট প্যাটার্ন’ পরীক্ষার তারিখ। উল্লেখ্য সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের সিসিটিভি থেকে উদ্ধার হওয়া ফুটেজে যাদের দেখা গিয়েছে, তারা যে মনোজিৎ ও অন্য অভিযুক্তরা, তা ‘গেট প্যাটার্ন’ পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যাবে। অভিযুক্তদের হাঁটাচলার ছবি তুলে তা সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে মেলানো হবে।
মনোজিতের আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মক্কেল রাজনীতির শিকার। যেসব মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে, সেগুলি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ফল। পাল্টা সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, বুধবার অভিযুক্তদের ‘গেট প্যাটার্ন’ পরীক্ষা হবে। হাঁটার ভঙ্গি দেখে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা হবে। গতকাল মনোজিৎ মিশ্র ছাড়াও আরও দুই অভিযুক্ত জইব আহমেদ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালতে পেশ করা হয়। মনোজিতের জামিনের আবেদন করা হয়নি। বাকি তিনজনের পক্ষে জামিন চাওয়া হলেও আদালত চারজনকেই ৫ অগাস্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আইনজীবী আরও বলেন জেলে তাঁর মক্কেলের যেন মশারি, কম্বল, জল, বাতাস এবং লেখার জিনিস দেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবী তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, পেন-পেপার পেলে সে নিজেকে ভালো ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে। অন্যদিকে, ধৃত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকীর আইনজীবী বলেন,’তাঁর মক্কেল ঘটনার সময় গার্ডরুমের বাইরে ছিল, এসবের কিছুই জানতেন না তিনি। কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন।’ তবে সরকারি আইনজীবীর মতে, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই মনোজিৎ গ্যাংকে সহযোগিতা করেছেন ওই পিনাকী। আদালত নির্দেশ দেয়, জেলে থাকাকালীন অভিযুক্তদের প্রয়োজনীয় সব জিনিস দিতে হবে। পুলিশ জেরা করলে, মনোজিতের পাশে তাঁর দুই আইনজীবী থাকতে পারবেন। তদন্ত এখনও চলছে, শীঘ্রই চার্জশিটও জমা পড়বে বলে জানিয়েছে পুলিশ।