ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ জুলাই : বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল এক চক্র। সেই ফাঁদে পা দিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা হারিয়েছেন কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকার এক যুবক। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে কলকাতার মধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে জানা গেছে, এই প্রতারণা চক্র শুধু কলকাতায় নয়, ঝাড়খণ্ডের ber JAMTARA-তেও সক্রিয় (Kolkata Jamtara Gang)। দীর্ঘদিন ধরেই জামতাড়া বিভিন্ন সাইবার অপরাধ চক্রের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, প্রতারণা করে যে টাকা উঠে আসত, তা দিয়ে অভিযুক্তরা বৈদ্যুতিন সামগ্রী কিনতেন এবং সেগুলি কলকাতায় বিক্রি করতেন।
গত ১৮ জুলাই গার্ডেনরিচ থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন ৩২ বছরের সন্দীপকুমার আগরওয়াল, যিনি আলিফ নগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানান, ১১ জুলাই তিনি অনলাইন প্রতারণার শিকার হন এবং তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ ১৮ হাজার ৪১০ টাকা তুলে নেওয়া হয়। সন্দীপের অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের নামে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে। সেই ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের সহায়তার জন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। সন্দীপ সেই নম্বরে ফোন করলে, ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলে পরিচয় দেয়। এরপর ওই ব্যক্তি সন্দীপকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিঙ্ক পাঠায় এবং অভিযোগ জানানোর জন্য সেই লিঙ্কে ক্লিক করতে বলে। সন্দীপ লিঙ্কে ক্লিক করতেই তাঁর মোবাইল ফোন হ্যাক হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সন্দীপ পুলিশকে জানান, তাঁর মোবাইল হ্যাক করে একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে মোট এক লক্ষ ১৮ হাজার ৪১০ টাকা তুলে নেয় প্রতারকরা। অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্তে নামে গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ। গঠিত হয় একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT), যার নেতৃত্বে ছিলেন অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) মেহতাব আলম এবং গার্ডেনরিচ থানার অতিরিক্ত ওসি নাদিম আখতার।
তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্তরা প্রতারণা করে পাওয়া টাকায় দামি বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম কিনত এবং সেগুলি কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করত। পুলিশ আরও জানতে পারে, এই প্রতারণা চক্র শুধুমাত্র কলকাতায় নয়, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়াতেও সক্রিয়। উল্লেখ্য, জামতাড়া দীর্ঘদিন ধরেই সাইবার প্রতারণার ঘাঁটি হিসেবে কুখ্যাত, সেখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে টার্গেট করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম— ২৬ বছরের মহম্মদ আরিফ খান, ২৮ বছরের রাজা হাতি, ২১ বছরের মহম্মদ আহসান আলি এবং ২৪ বছরের বিকাশ কুমার। আরিফ, রাজা ও আহসান— তিন জনই কলকাতার বাসিন্দা এবং তাঁদের গ্রেফতার করা হয় লেকটাউন এলাকা থেকে। অন্যদিকে, বিকাশ কুমারকে পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকা থেকে ধরা হয়; তিনি আদতে ঝাড়খণ্ডের দুমকার বাসিন্দা।
তল্লাশির সময় পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে ৩৯টি মোবাইল ফোন, আটটি পাওয়ার ব্যাঙ্ক, তিনটি সিল করা হাতঘড়ি, একটি ট্যাব, দু’টি সিল করা ব্লুটুথ স্পিকার, একটি সিল করা হেডফোন, একটি স্কুটি এবং নগদ আড়াই লক্ষ টাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর আনুমানিক মূল্য ১৫ থেকে ১৭ লক্ষ টাকার মধ্যে। গ্রেফতার হওয়া চারজনকে রবিবার আদালতে তোলা হচ্ছে। এই প্রতারণা চক্রে আরও কেউ যুক্ত আছে কি না, বা কীভাবে পুরো টাকা লেনদেনের প্রক্রিয়া চলত— তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।