ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ জুলাই : আবারও আদালতের তিরস্কারের মুখে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। এবার তাদের কার্যপরিধি বা এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলল মাদ্রাজ হাই কোর্ট। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইডি চাইলে যে কোনও বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে পারে—এমন কোনো অবারিত অধিকার তাদের নেই। আদালতের মন্তব্য, ইডির নজরে এলেই সেই বিষয়টি তাদের তদন্তের আওতায় পড়ে, এমন ধারণা সঠিক নয় (Madras High Court ED)।
চেন্নাইয়ের আরকেএম পাওয়ারজেন প্রাইভেট লিমিটেড-এর ৯০১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) মুক্ত করার নির্দেশ চেয়ে মামলার শুনানিতে মাদ্রাজ হাই কোর্ট এদিন ইডির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালত স্পষ্ট করে জানায়, ইডির হাতে সব বিষয়ে তদন্ত করার সীমাহীন অধিকার নেই। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ইডি ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফ্রিজ করে দেয়। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয় আরকেএম সংস্থা।
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৬ সালে, ছত্তীসগড়ে একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লা ব্লক বরাদ্দকে ঘিরে। সেই সময় সিবিআই একটি এফআইআর দায়ের করে। পরে সেই মামলার ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের (PMLA) আওতায় ২০১৪ সালে একটি ইসিআইআর (ECIR) রেজিস্টার করে ইডি।
আর্থিক প্রতারণা প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে ইডিকে কড়া ভাষায় সতর্ক করল মাদ্রাজ হাই কোর্ট। বিচারপতি এমএস রমেশ ও বিচারপতি ভি লক্ষ্মীনারায়ণের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়—ইডি কোনও ‘ড্রোন’ বা ‘আত্মঘাতী অস্ত্র’ নয়, যে ইচ্ছেমতো যাকে খুশি নিশানা করবে। আবার তারা কোনও ‘সুপার কপ’ও নয়, যে সব ধরনের মামলায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “ইডি কেবলমাত্র তখনই তদন্ত করতে পারে, যখন পিএমএলএ আইনের আওতায় কোনও অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বা সেই ধরনের অপরাধের পরিষ্কার পূর্বাভাস রয়েছে।” ডিভিশন বেঞ্চ আরও মন্তব্য করে, “যদি কোনও পূর্ব অপরাধের ইঙ্গিত না থাকে, তাহলে পিএমএলএ আইনের অধীনে তদন্ত শুরু করাটা আইনসম্মত নয় এবং সেটি প্রত্যাশিতও নয়।”
২০১৭ সালে সিবিআই প্রাথমিক তদন্তে কোনও অনিয়মের প্রমাণ না পেয়ে একটি ক্লোজার রিপোর্ট জমা দেয়। তবে বিশেষ আদালত সেই রিপোর্ট গ্রহণ না করে, পরিবেশ ছাড়পত্র-সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের উপর আরও তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর দীর্ঘ তদন্তের পর ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে সিবিআই একটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয়, যেখানে প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে স্পষ্টভাবে জানায়, “ইডি কোনও ভেসে বেড়ানো ড্রোন নয় যে, ইচ্ছেমতো যে কোনও অপরাধে গিয়ে আক্রমণ চালাতে পারে।” আদালতের বক্তব্য, পিএমএলএ অনুযায়ী কোনও তদন্ত শুরু করতে গেলে প্রথমেই এটি প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন যে সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি আইন অনুযায়ী অপরাধ, এবং সেই অপরাধ থেকে অর্থ উপার্জন হয়েছে।
আদালত ইডির ভূমিকাকে তুলনা করে একটি ‘লিম্পেট মাইন’-এর সঙ্গে, যা একটি জাহাজে বসানো থাকে। যদি সেই ‘জাহাজ’ই না থাকে—অর্থাৎ, যদি পিএমএলএ অনুযায়ী কোনও অপরাধ এবং অপরাধ থেকে অর্জিত অর্থ না থাকে—তাহলে ওই ‘মাইন’ অর্থাৎ ইডির তদন্তও কার্যকর হতে পারে না। এই মামলায় আদালত ইডির পদক্ষেপকে ‘অতিরিক্ত ও আইন বহির্ভূত’ বলে অভিহিত করেছে এবং সংস্থাটির ৯০১ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ফ্রিজ করার আদেশ বাতিল করে দিয়েছে।