ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ মে: অশান্তির পর এই প্রথম মুর্শিদাবাদ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ধূলিয়ানে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করা এবং জাফরাবাদে নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ (Mamata Banerjee Murshidabad)। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের আগেই ওই নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মুর্শিদাবাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনাগুলি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। তাঁর দাবি, ধর্মের নামে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে কিছু মানুষ সাধারণ জনগণকে প্ররোচিত করছে, যার ফলেই এই ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, মুর্শিদাবাদে ঘটে যাওয়া ঘটনার আসল সত্য খুব শিগগিরই জনসমক্ষে আসবে এবং সমস্ত ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস হবে।
ওয়াকফ অশান্তির উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতেই মুর্শিদাবাদ সফরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই অশান্তির জন্য সরাসরি বিজেপিকেই দায়ী করলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গোটা পরিস্থিতি তিনি শুরু থেকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়েছে—মুর্শিদাবাদে পরিকল্পিতভাবে অশান্তি ছড়ানো হয়েছিল।
তবে শুধু অভিযোগেই থেমে থাকেননি মমতা; সংবাদমাধ্যমের সামনে অশান্তির পেছনে থাকা চক্রান্তের যাবতীয় প্রমাণ তুলে ধরবেন বলেও ঘোষণা করেন তিনি। একইসঙ্গে, নাম না করে হিন্দু ধর্মস্থানের দায়িত্বে থাকা একাংশ কর্তাব্যক্তির দিকেও ইঙ্গিতপূর্ণ আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী।
সামশেরগঞ্জে সম্প্রতি যে দাঙ্গা-অশান্তির ঘটনা ঘটে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ সমস্ত শীর্ষ আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা ছিল—অপরাধীরা যাতে কোনওভাবেই ছাড়া না পায়। সেই নির্দেশ মেনে চলছে ধারাবাহিক ধরপাকড়। পাশাপাশি, দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ।
তৎকালীন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এখন সামশেরগঞ্জ যাওয়ার উপযুক্ত সময় নয়, পরিস্থিতি শান্ত হলে তবেই যাব।” রাজ্যপাল সেই সময় তাঁর অনুরোধ না শুনলেও, মুখ্যমন্ত্রী নিজের কথা রেখেছেন। অবশেষে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সোমবার তিনি রওনা হন মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে। এই দিন ডুমুরজলায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, “মুর্শিদাবাদে আগেই যেতে পারতাম। কিন্তু শান্তি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত গিয়ে স্থানীয়দের বিরক্ত করতে চাইনি। এখন পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে স্থিতিশীল। তবে মাঝে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের মতো পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল, যা শেষ করেই আজ আমি যাচ্ছি।”
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানে গিয়ে সাম্প্রতিক অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। তাঁদের মধ্যে আস্থা ও ভরসা জোগাতে চান তিনি। ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণ সহ প্রয়োজনীয় সবরকম প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়েই তিনি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিতে রয়েছে সুতির ছাবঘাটি ময়দানে একটি বড় জনসভা, যেখানে উপভোক্তাদের জন্য একাধিক সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি চালু হবে। ওই সভা থেকেই বহু সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার কথা রয়েছে।
Comments are closed.