Mamata Banerjee On DVC : ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলেও কাজ হয়নি’, না জানিয়ে জল ছাড়ছে ডিভিসি : মমতা

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৫ জুলাই : বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ডিভিসিকে (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি (Mamata Banerjee On DVC)। মমতার অভিযোগ, ডিভিসি বারবার পূর্ব সতর্কতা না দিয়ে জল ছেড়ে দেওয়ার কারণেই রাজ্যে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, এই সমস্যা নিয়ে বহুবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি নিজে। কিন্তু কেন্দ্র কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, আর্থিক দিক থেকেও বারবার বাংলা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।

লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে বাংলার একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঘাটাল এলাকায়, যেখানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের নিচে ডুবে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) ১৮ জুন থেকে লাগাতার জল ছেড়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৭ লক্ষ কিউসেক মিটার জল ছাড়া হয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মমতার অভিযোগ, ডিভিসি কাউকে কোনও রকম পূর্বাভাস না দিয়েই জল ছেড়ে দিচ্ছে এবং কারও কথা শুনছে না। তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন তিনি নিজে, কিন্তু কেন্দ্র থেকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, অসমে বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাঠালেও, বাংলা সেই সাহায্য থেকে বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেখানে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি তিনজন উচ্চপদস্থ সচিব, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা শাসক (ডিএম) ও পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়মিত নজরদারি চালাবেন। বন্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। সেই কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রমের ওপর তিনি নিজে সরাসরি নজর রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বন্যার সময় জলবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দুর্গত এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত ওষুধ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তরকে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। সেগুলোর কার্যক্রমে কড়া নজর রাখবেন সংশ্লিষ্ট জেলার ডিএম ও এসপি। বিশেষ নজর দেওয়া হবে ঘাটাল, খানাকুল ও ঝাড়গ্রামের মতো জলবাহিত অঞ্চলে। ঘাটালের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মাস্টার প্ল্যান নিয়েও আশার কথা শোনান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আশা করছি আগামী দু’বছরের মধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শেষ হবে। তখন আপনাদের আর এই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হবে না।” এই সংকটের সময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিরোধী দলগুলিকেও সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দলমত নির্বিশেষে সকলে পাশে দাঁড়ান। প্রশাসনের কাজে কোনওভাবেই বাধা সৃষ্টি করবেন না।” পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “গুজব ছড়াবেন না। পজিটিভ খবর প্রচার করুন। সাধারণ মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেই দিকে নজর দিন।”