ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ মে : উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির এসপি, আইসি ও ওসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যাতে কোনো জঙ্গি বা সন্দেহজনক দুষ্কৃতী গোপন আশ্রয় গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য নজরদারি আরও বাড়াতে হবে (Mamata Banerjee on Terrorism)। বুধবার উত্তরকন্যা প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভায় তিনি সাধারণ জনগণকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, ভিন্রাজ্য থেকে কিছু ব্যক্তি গোপনে ঢুকে স্থানীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ভোটার কার্ড ও আধার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অনেকে প্রতারণা করছে, এমন ঘটনা তাঁর দলের সদস্যদের সঙ্গেও ঘটেছে। তাই তিনি জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, যেন বাইরের কেউ জঙ্গি কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে আশ্রয় নিতে না পারে বা মিথ্যা কথা বলে তথ্য হাতিয়ে নিতে না পারে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে পরামর্শ দিয়েছেন, কোনো ব্যক্তিকে চট করে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া উচিত নয়, আগে তার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রাম, মালদহ, কোচবিহার, কলকাতা এবং ডায়মন্ড হারবারে পুলিশের অভিযানে এমন দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন যে আগের মতো পুলিশি তৎপরতা এখন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিকর শক্তিও বেড়েছে, যা আগে এতটা প্রবল ছিল না। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আগে পুলিশ একাধিকবার এলাকায় টহল দিত, এখন সেই প্রবণতা কমে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, পুলিশ ভ্যান যত বেশি সংখ্যায় এলাকায় টহল দেবে, জনগণও বুঝবে যে পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই পুলিশের সজাগ থাকা জরুরি। তিনি বলেন, “বিএসএফ দায়িত্বে থাকলেও পুলিশের উচিত নিজে সতর্ক থাকা।” তিনি উল্লেখ করেন, শীতলখুচি থেকে সম্প্রতি একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এবং উদয়ন গুহ তাঁকে বিষয়টি জানানোর পর সরকার জামিনের ব্যবস্থা করে তাকে মুক্ত করেছে। তাই তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “শুধুমাত্র বিএসএফের দায়িত্ব ভেবে বসে থাকবেন না। পাড়ার ক্লাবগুলিকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করুন।” এছাড়াও তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ যেন এক নৌকার মতো। সিকিমে বর্ষা হলে উত্তরবঙ্গ প্লাবিত হয়, ঝাড়খণ্ডে হলে দক্ষিণবঙ্গ জলমগ্ন হয়ে পড়ে, এমনকি ভুটানের বাঁধ থেকে জল ছাড়া হলেও বন্যা হয়।” এরপর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, “অসম অর্থ সাহায্য পেলেও আমরা তা পাই না। তবে অতিরিক্ত অভিযোগ করে তিক্ততা বাড়াতে চাই না।” অবশেষে, তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “সিকিম ও ভুটানে ইতিমধ্যেই বন্যা হয়েছে, তাই সচেতন থাকুন, মানুষের পাশে থাকুন এবং বর্ষাকালীন কাজের প্রস্তুতি নিন।”
Comments are closed.