Mamata On Detention Camp : কেন্দ্রকে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এর হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর! বাঙালি অস্মিতায় শান দিয়ে মমতা বললেন, ‘খেলা হবে’!

9

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৬ জুলাই : বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও বহু নেতা-কর্মী। মিছিল শেষ হয় ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সেখানকার মঞ্চ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— “আমি আরও বাংলায় কথা বলব। যদি ক্ষমতা থাকে, তবে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেখান (Mamata On Detention Camp)।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্র সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যা নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি তুলেছেন। সেই বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে কাউকে সন্দেহ হলে এক মাস জেলে রেখে দেওয়া যাবে? তাও আবার বিনা বিচারে? এটা কী ধরনের ব্যবস্থা! এটা তো জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়াবহ। একদিকে ইন্দিরা গান্ধীকে গালাগাল দিয়ে সুপার ইমার্জেন্সি ডে পালন করছেন, আর অন্যদিকে নিজেরাই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা জরুরি অবস্থাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এটা তো পুরোপুরি বেআইনি। এমন আইন তৈরি করা হয়েছে, যার মানে নিজেরাও বোঝেন না।” তিনি আরও বলেন, “ভারত সরকার গোপনে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করব, কেন্দ্রের এই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি বাংলার জন্য কাজ করি, বাংলার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমাকে বাংলায় কাজ করতে দিন। যদি এখানে আমার কাজে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে আমি সারা দেশজুড়ে ঘুরে কথা বলব। কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারবে না। আমি দেখতে চাই, কতগুলো ডিটেনশন ক্যাম্পে আমাকে পাঠানো সম্ভব। সেখানে গিয়েও আমি বাংলাতেই কথা বলব।” তিনি আরও বলেন, “যদি বাংলার মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর চেষ্টা করেন, তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদের (বিজেপিকে) নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ডিটেনশনে পাঠাবে। মনে রাখবেন, বিজেপি, খেলা হবে। তৈরি থাকুন।” বিহারে ভোট কেটে নেওয়ার অভিযোগ তুলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি শুনেছি বিহারে প্রায় ৩০.৫ লক্ষ ভোট বাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই মহারাষ্ট্রে জিতে গেছে বিজেপি—না হলে জিততে পারত না। দিল্লিতেও একই কৌশল প্রয়োগ হয়েছে। এখন বিহারে আবার এই পরিকল্পনা করছে। বাংলাতেও এমন ষড়যন্ত্রের ছক কষা হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রস্তুত। প্রতিটি ইঞ্চি জমির জন্য লড়ব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চিও ছাড়ব না।”

বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ দেশের নানা প্রান্তে বাঙালিদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে—এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কোথাও গণধরপাকড়, কোথাও বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া, আবার কোথাও কর্মক্ষেত্রে চরম অবমাননার শিকার হতে হচ্ছে বাংলাভাষীদের। তৃণমূলের দাবি, এই পরিস্থিতি শুধু মুসলিম বাঙালিদের জন্য নয়—হিন্দু বাঙালিদেরও একইভাবে নিশানা করা হচ্ছে। ধর্মতলার সভা থেকে এই ইস্যুতে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা বলার অপরাধেই হিন্দুদের ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে। এটা ধর্মের নয়, ভাষার ওপর আক্রমণ।” অন্যদিকে, বিজেপির একটি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, যাঁরা ভিনরাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে রোহিঙ্গা মুসলিম। সেই প্রচারেই বলা হচ্ছে, হিন্দু বাঙালিরা নিরাপদ ও সুরক্ষিত। তবে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য সেই ধারণা ভেঙে দেয়। উদাহরণ হিসাবে তৃণমূল তুলে ধরেছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনা, যেখানে শান্তনু ঠাকুর এবং সুকান্ত মজুমদারের স্বাক্ষরিত নথি থাকা সত্ত্বেও দিল্লিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁদের হেনস্তা করা হয়েছে।

এদিনের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে মতুয়া ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ আলাদাভাবে তুলে ধরা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ২০১৪ সালের পর বাংলায় বিজেপির যে সামগ্রিক উত্থান ঘটেছে, তার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে এই দুই সম্প্রদায়। এমনকি ২০২১ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির শক্তি অনেকটা হ্রাস পেলেও, মতুয়া ও রাজবংশী অঞ্চলগুলি তুলনামূলকভাবে বিজেপির দখলেই থেকেছে। তবে বুধবারের সভা থেকে মমতা স্পষ্ট বার্তা দিলেন—বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মতুয়া এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষও নিরাপদ থাকবেন না। তাঁর কথায়, এই সম্প্রদায়গুলিও ভাষা ও নাগরিকত্বের প্রশ্নে হেনস্তার শিকার হতে পারেন।