ডিজিটাল ডেস্ক, ৬ মে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৭ মে, বুধবার, দেশজুড়ে একটি অসামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে, যার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা। এই মহড়া দেশের ২৭টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৫৯টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার ৩১টি স্থানে মহড়া অনুষ্ঠিত হবে (Mock Drill West Bengal)।
পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো:
কলকাতা
বর্ধমান
বীরভূম
দার্জিলিং
হুগলি
হাওড়া
জলপাইগুড়ি
মুর্শিদাবাদ
পূর্ব মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুর
এই মহড়ায় সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে, প্রাথমিক চিকিৎসা, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবহার, এবং অন্যান্য জরুরি পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শত্রুপক্ষের বিমান হানার সময় সাধারণ মানুষকে কী করতে হবে, তা বোঝাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের সম্ভাব্য ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলির সিভিল ডিফেন্স ইউনিটগুলিকে উদ্ধার কার্যক্রম সংক্রান্ত মহড়াও চালাতে বলা হয়েছে। এছাড়া, বিমান হানার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বাজলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত, কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যদি স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়, তখন কী করতে হবে—এই সব বিষয়েই মহড়া করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

এই মক ড্রিলে নাগরিকদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয়ঃ-
বিশেষত, সাইরেন বাজলেই ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা, জানলা বন্ধ করে ফেলতে হবে।
ঘরের-বাইরের সমস্ত আলো নিভিয়ে, ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করে ব্ল্যাকআউট করতে হবে।
যে কোনও বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় ক্যামোফ্লাজ ও আপৎকালীন প্রস্থান ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কোনও গুজবে কান দেবেন না বা গুজব ছড়াবেন না। সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, দেশের ২৭টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অসামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়ও এই মহড়ার আয়োজন করা হবে। বাংলায় যেখানে মহড়া হবে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে—কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদহ, শিলিগুড়ি, বৃহত্তর কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, খড়্গপুর, বার্নপুর-আসানসোল, ফারাক্কা-খেজুরিয়াঘাট, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেঘলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কালিম্পং, জলঢাকা, কার্শিয়াং, কোলাঘাট, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি এবং মুর্শিদাবাদ।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, এই মহড়ায় অংশ নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক, প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরিক সুরক্ষা কর্মী এবং হোমগার্ডরা। পাশাপাশি, এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথমবার দেশজুড়ে এত বৃহৎ পরিসরে অসামরিক মহড়ার আয়োজন হতে চলেছে। এমনকি ২০১৯ সালে উরি হামলার পর হওয়া সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কিংবা বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের সময়েও কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। কার্গিল যুদ্ধের সময়ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য এমন মহড়ার উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে ১৯৭১ সালের পর দীর্ঘ ৫৪ বছর পর, ২০২৫ সালে ফের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অসামরিক মহড়ার নির্দেশ জারি করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
Comments are closed.