ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ জুন : নন্দীগ্রামে ফের একবার চোখে পড়ার মতো সাফল্য পেল বিজেপি। কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের জোরালো প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে গিয়ে ১২টি আসনের সবকটিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। ২০২৫ সালের জুনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি শিবিরে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই জয় শুধু একটি সমবায় সমিতির দখল নয়, বরং নন্দীগ্রামে বিজেপির জমি শক্ত হচ্ছে—এবং তা স্থানীয় জনসমর্থনেরই প্রতিফলন (Nandigram Vote BJP Win)।
নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র বরাবরই রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম হটস্পট হিসেবে বিবেচিত। বিশেষত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে এই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, যা নন্দীগ্রামকে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটেই কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ১২টি আসনের এই নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে প্রবল সংঘাত দেখা যায়, যা মূলত বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ছিল গোটা এলাকা। পুলিশের টহল ও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ভোটারদের মধ্যে ছিল প্রবল উৎসাহ—সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সন্ধ্যায় ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, প্রতিটি আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এই নিরঙ্কুশ জয় ঘিরে এলাকায় উচ্ছ্বাস ছড়ায়।
নন্দীগ্রামের মতো রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় বিজেপির এই সাফল্যকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় শুধুমাত্র এক সমবায় সমিতির দখল নয়, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বটে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, এই ফলাফল স্থানীয় জনগণের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশাসনের প্রতি জমে ওঠা ক্ষোভ ও দলবদলের প্রবণতার প্রতিফলন।
নন্দীগ্রাম দীর্ঘদিন তৃণমূল কংগ্রেসের অবিসংবাদিত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। বিশেষ করে ২০০৭ সালের কৃষি জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ২০২১ সালে সেই নন্দীগ্রাম থেকেই মমতাকে পরাজিত করেন শুভেন্দু অধিকারী, যা শাসকদলের কাছে ছিল এক বড় ধাক্কা। তারপর থেকেই নন্দীগ্রাম রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যেখানে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত। যদিও ২০২৫ সালের জুন মাসে বিজেপি ছেড়ে ৫০-এরও বেশি নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন, তবুও সদ্যসমাপ্ত সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয় প্রমাণ করে—এই এলাকায় এখনও তাদের সংগঠনিক ভিত্তি যথেষ্ট শক্তপোক্ত।
নির্বাচনের দিন নন্দীগ্রামের কালীচরণপুরে ছিল কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলির চারপাশ ঘিরে ছিল পুলিশের টহল ও কড়া নজরদারি, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। অতীতে তৃণমূল ও বিজেপি—উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের ব্যবহার করে অশান্তি তৈরির অভিযোগ তুলেছিল। তবে এবারের নির্বাচনে পুলিশি তৎপরতায় বড় কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, যা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাধারণ মানুষ। ফলাফল ঘোষণার পর জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে গেরুয়া আবিরে রঙিন হয়ে ওঠে গোটা এলাকা, উদযাপনে মাতেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
নন্দীগ্রামে কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনী ফলাফল বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি এবং শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাবকে আরও একবার প্রমাণ করে দিল। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, এই জয় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির আত্মবিশ্বাস ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে। অন্যদিকে, এই পরাজয় তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য পূর্ব মেদিনীপুর সফরে দলীয় নেতৃত্বকে নন্দীগ্রামে সংগঠনের ভিত মজবুত করার বার্তা দিলেও, এই ফলাফল তাদের সেই প্রচেষ্টায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
এই নিরঙ্কুশ জয় নিছক একটি সমবায় সমিতির নির্বাচনের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি নন্দীগ্রামে বিজেপির জনপ্রিয়তা ও সংগঠনের জমি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত বহন করে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই জয় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে আগামী দিনে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করে তুলবে, এবং বিজেপির জন্য এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে নির্বাচনী রণকৌশল গঠনের ক্ষেত্রে।