Nimisha Priya:নতুন জীবন ! কেরলের নার্সের সাময়িক ফাঁসি স্থগিতে ইয়েমেনের ধর্মগুরু ?

13

ডিজিটাল ডেস্ক ১৬ই জুলাইঃ সূর্য উঠল ইয়েমেনে,একইসঙ্গে সূর্যের কিরণ পৌঁছল নিমিশা প্রিয়ার জীবনেও। আজ,১৬ই জুলাই ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা ছিল কেরলের নার্সের। শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করা হল মৃত্যুদণ্ডের সাজায়। এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না কেরলের নার্স,তবে কিছুটা হলেও বাঁচার আশা দেখছেন তিনি।

কেরলের নার্সের কাহিনি এখন প্রায় সকলের জানা। ২০০৮ সালে ইয়েমেনে কাজ করতে গিয়েছিলেন নিমিশা প্রিয়া। এরপরে ইয়েমেনে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়,তখন নিমিশার স্বামী সন্তানকে নিয়ে ভারতে ফিরে এলেও, নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে যান(Nimisha Priya)।

এরপর সেখানেরই বাসিন্দা তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। নিজের ক্লিনিক খুলতে চেয়েছিলেন নিমিশা, তবে ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী কোনও স্থানীয় ব্যক্তির অংশীদারিত্ব ছাড়া ব্যবসা খোলা সম্ভব নয়। সেখান থেকেই তালালের সঙ্গে পরিচয়, ব্যবসায়িক সম্পর্ক। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভয়ঙ্কর পরিণতি নেয়। তালাল নিমিশার পাসপোর্ট কেড়ে নেন। তার উপরে অত্যাচার শুরু করেন।

নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করতেই চরম পদক্ষেপ করেন নিমিশা। তিনি নিয়মিত তালালকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে থাকেন। তবে একদিন ওভারডোজের কারণে তালাল চিরঘুমে চলে যান। এরপরই ভয় পেয়ে নিমিশা হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে তালালের দেহ কুচি কুচি করেন এবং তা জলের ট্যাঙ্কে ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালে ইয়েমেনের কঠোর শরিয়া আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয় নিমিশাকে।

ভারত সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে নিমিশাকে বাঁচানোর নানা প্রচেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রতিটা চেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছিল। ২০২০ সালে শোনানো হয় মৃত্যুদণ্ডের সাজা। ২০২৩ সালে সেই সাজা বহাল রাখে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’। নিমিশার প্রাণভিক্ষার আবেদন করে তাঁর পরিবার। গত ডিসেম্বরেও সেই আবেদন খারিজ করে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট। আবেদন খারিজ করেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমিও। শেষে একটাই পথ খোলা ছিল নিমিশার সামনে- ব্লাড মানি বা দিয়া।

কী এই ব্লাড মানি?
মৃত্যুদণ্ডের কড়িকাঠ থেকে নিমিশার ফেরার একমাত্র উপায় হল যদি নিহত ব্যক্তির পরিবার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করতে রাজি হয় এবং তার বদলে ক্ষমা ঘোষণা করে। ওপ্রান্ত থেকে দাবি করা হয়, ৮ কোটি টাকা দিতে হবে। নিমিশাকে বাঁচাতে তার পরিবার, পরিজন ও সমর্থকরা ১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছিল, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি টাকারই সমান। তবে তারপরও নিমিশার ঘাড়ের মৃত্যুদণ্ড সাজাই বহাল থাকে। সদুত্তর মিলছিল না কোনও।

ধর্মের জোরে রক্ষা পেলেন নিমিশা-
আজ, ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের সাজার কথা ছিল নিমিশার। তবে ঠিক আগের রাতেই যেন ম্যাজিক হল। আপাতত স্থগিত করা হল মৃত্যুদণ্ডের সাজা। নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিলের আইনজীবী সুভাষ চন্দ্রন জানান, মামলা শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার নিহতের ভাই কথা বলতে রাজি হন। সারা রাত কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সকালে জানানো হয়, মৃত্যুদণ্ডের সাজা পিছিয়ে দেওয়া হল। এখন যদি নিমিশার আইনজীবীরা তালালের পরিবারকে ব্লাড মানি গ্রহণ করতে রাজি করাতে পারে এবং ক্ষমা ঘোষণা করাতে পারে, তাহলেই একমাত্র রক্ষা পাবে নিমিশার প্রাণ।

নাহ,ভারতীয় দূতাবাস বা আদালত এই মৃত্যুদণ্ডের সাজা পিছোতে পারেনি। বরং ধর্মীয় বিশ্বাসের জোরেই আপাত রক্ষা পেল নিমিশার প্রাণ। কেরলের ইসলামিক ধর্মগুরু কান্তাপুরম এপি আবু বকর মুসলিয়ারের মধ্যস্থতাতেই তালালের পরিবার এত বছরে প্রথমবার আলোচনায় রাজি হল। ৯৪ বছর বয়সী মুসলিয়ার পরিচিত ভারতের ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসাবে। তিনি সুন্নি মুসলিমদের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি। কেরলের মারকাজের মাধ্যমে তিনিই ইয়েমেনের ধর্মযাজকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারাই তালাল আবদো মেহদির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের আলোচনায় বসতে রাজি করান।

প্রসঙ্গত, ইসলামে মুফতি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ইসলামিক আইন শরিয়া ও ফতোয়া জারি করার ক্ষমতা রাখেন। ধর্মীয় ও পারিবারিক বিষয়ে ইসলামিক আইন ব্যাখ্যা করার কাজ করেন মুফতি। গ্রান্ড মুফতি হলেন দেশ কিংবা কোনও একটি অঞ্চলের সর্বোচ্চ মুফতি। ভারতে ঘোষিত কোনও মুফতি না থাকলেও, কান্তাপুরমকেই গ্র্যান্ড মুফতি বলে মনে করা হয়।

ইসলামিক আইন বুঝিয়ে কান্তাপুরম এপি আবু বকর মুসলিয়ার বলেন, “ইসলামে আরও একটি আইন আছে। যদি কোনও খুনিকে মৃত্যুর সাজা দেওয়া হয়, তবে নিহতের পরিবার ক্ষমা করতে পারেন। আমি এই পরিবারকে চিনি না, তবে দূর থেকে বসেই আমি ইয়েমেনের মুফতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমি তাদের বোঝাই। ইসলামে মানবতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।”

ক্ষমাই একমাত্র পথ-
মৃত্যুদণ্ড পিছোনোয় খুশি নিমিশার পরিবার। তাঁর স্বামী টমি থমাস বলেন, “আপাতত সাজা স্থগিত হয়েছে। এটা ভাল খবর। আমরা খুশি। ওঁর মৃত্যুদণ্ড রুখতে এবং সুরক্ষিতভাবে ভারতে ফেরানোর প্রচেষ্টা চলবে।”এখন নিমিশার সামনে আর কোনও আইনি পথ খোলা নেই। আদালতে আর শুনানি হবে না। এবার তাঁর প্রাণ নির্ভর করছে তালালের পরিবারের উপরেই। তারা যদি দিয়া নিয়ে নিমিশাকে ক্ষমা করেন, তবেই তিনি প্রাণে বাঁচবেন। আর ক্ষমা না করলে, মৃত্যুদণ্ডই ভবিতব্য নিমিশার।