Operation Sindoor : ভারতের ব্যাখ্যা

10

ডিজিটাল ডেস্ক, ৭ মে: ভোররাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আঘাত হানল ভারতীয় বাহিনী। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার জবাব পাকিস্তানকে ভারত নিজের পছন্দের সময়ে এবং পছন্দের স্থানে দেবে বলে ন‍য়াদিল্লির তরফে আগেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।

এরপরেই অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি। সঙ্গে ছিলেন ৩ বাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। মুম্বই হামলা, উরি, পুলওয়ামা, পহেলগাঁও-সহ ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া একাধিক জঙ্গি হামলার ভিডিও তুলে ধরা হল বিদেশ সচিব ও সেনাবাহিনীর সাংবাদিক সম্মেলনে। ‘আর নয়, এবার শুরু ‘অপারেশন সিঁদুর’-দেওয়া হল বার্তা।

কাশ্মীরের অর্থনীতি ধ্বংসের চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা। উপত্যকার বিকাশ রুখে সন্ত্রাসের বীজ পুঁততে চেয়েছিল তারা। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন বিদেশ সচিব মিসরি।

ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সম্প্রতি পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, “মুম্বই হামলার পর এটি সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা।” তিনি উল্লেখ করেন, “পরিবারের সামনে পুরুষদের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যা কাশ্মীরের উন্নয়নের উপর আক্রমণ।” তিনি আরও জানান, “জঙ্গি সংগঠন ‘টিআরএফ’ হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং জইশ ও লস্কর এই ধরনের ছোট সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে।” এটি ভারতের দৃঢ় প্রতিক্রিয়া ও জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।

ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে বলেছেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় এবং জেনেশুনে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়।” তিনি আরও বলেন, “পহেলগাঁও হামলার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই, ভারত সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে ওই ঘটনার জন্য ন্যায়বিচার প্রয়োজন ছিল।” তিনি উল্লেখ করেন, “পাকিস্তান হামলার দায় অস্বীকার করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।” ভারতের এই প্রতিক্রিয়া সন্ত্রাসবাদের কাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

এরপরেই কর্নেল সোফিয়া খুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানালেন কী ভাবে পাকিস্তানে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরা বলেন, ‘‘পাকিস্তানে মোট ন’টি ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়েছে। সেগুলিকে পুরো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে।’’

কোথায় কোথায় কেন হামলা চালানো হয়েছে, তালিকা দেন ব্যোমিকা, সোফিয়ারা। তাঁদের তালিকা অনুযায়ী, প্রথম নিশানা ছিল শুভান আল্লাহ মসজিদ, সেখানে লশকর-এ-তৈবার ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। বিলাল মসজিদে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যে মসজিদে হামলা হয়েছে, তা লশকরের ঘাঁটি। এই ঘাঁটি পুঞ্চে সক্রিয়। এগুলি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রয়েছে।

ব্যোমিকা, সোফিয়ারা জানান, পাকিস্তানের ভিতরে শিয়ালকোটের সার্জাল ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমা থেকে তা ছ’কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া হামলা হয়েছে মেহমুনা জোয়া ক্যাম্পে। সেখানে হিজ়বুলের ক্যাম্প ছিল। পঠানকোটে এখান থেকেই হামলা চালানো হয়। মুরিদকের মারকাজ় তৈবায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ২৬/১১ মুম্বই হামলার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখান থেকেই। আজ়মল কসাবও উঠে আসেন এখান থেকেই।

তারা আরও জানান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক সেনাঘাঁটি বা সাধারণ কোনও নাগরিককে নিশানা করা হয়নি। তাঁরা বলেন, ‘‘এখনও কোনও সাধারণ নাগরিকের ক্ষতি করা হয়নি। নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বিল্ডিংয়ে হামলা হয়েছে। সেনাঘাঁটিতে কোনও হামলা হয়নি। প্রযুক্তির সাহায্যে ওই ভবনগুলি ভাঙা হয়েছে।’’

পাশাপাশি ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার পাকিস্তানে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’কে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে ইজরায়েল সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সন্ত্রাসীদের জেনে রাখা উচিত যে নিরীহদের উপর হামলা চালিয়ে লুকিয়ে থাকা যায় না।” এটি ইজরায়েলের দৃঢ় অবস্থান এবং ভারতের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রতিফলন।

Comments are closed.