Operation Sindoor Masood Azhar : ভারতের প্রত্যাঘাতে নিহত জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের বোন-সহ পরিবারের ১০ জন!
ডিজিটাল ডেস্ক, ৭ মে: ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয় (Operation Sindoor Masood Azhar)। এই অভিযানে পাকিস্তান দাবি করেছে যে, ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। ভারত এই হামলাকে ‘যুদ্ধের act’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছেন (Operation Sindoor Masood Azhar)। নিহতদের মধ্যে তাঁর বোন এবং শ্যালকও রয়েছেন।
বহু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে—ভারতীয় বাহিনী কেন বহওয়ালপুর শহরকেই তাদের অভিযানস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিল? বহওয়ালপুরকে জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। জানা যায়, সংগঠনটির প্রধান দফতর ‘জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্’ ক্যাম্পাসেই অবস্থিত, যেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এমনকি, সেই ক্যাম্পাসেই থাকতেন আজহার।
মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে একযোগে ২১টি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আজ়হার দাবি করেন, ভারতীয় হামলায় তাঁর পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি স্পষ্ট করেন যে, এ নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনও অনুশোচনা বা দুঃখ নেই। তবে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের সংখ্যা ১০ নয়, বরং আজহার-ঘনিষ্ঠ ১৪ জন ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
এই হামলায় আজহারও কি নিহত হয়েছেন?
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন, এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা আজ়হার, যার বিরুদ্ধে একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যদিও ২০০২ সালে সংগঠনটিকে পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল, বাস্তবে তা শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ ছিল বলে অভিযোগ। পাকিস্তানে অবস্থিত একটি ক্যাম্পাস থেকে জইশ জঙ্গিরা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল।
ভারতে সংঘটিত একাধিক জঙ্গি হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল জইশ— ২০০১ সালে দিল্লির সংসদ হামলা, ২০১৬ সালে পঠানকোট বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ, কিংবা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা। ২০০১ সালের সংসদ হামলার পর থেকে আজ়হার অন্তরালে চলে যান, তবে ২০২৪ সালের শেষ দিকে বহওয়ালপুরে তাঁর উপস্থিতির খবর পাওয়া যায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা তাঁর গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখছিলেন, এবং সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি বহওয়ালপুরের ওই ক্যাম্পাসে বসেই নতুন এক জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
বিশ্বাস করা হয়, এই তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতীয় বিমানবাহিনী বহওয়ালপুরে জইশের ঘাঁটিতে হামলা চালায়। যদিও এই হামলায় তাঁর পরিবারের সদস্যেরা নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে, আজহার নিজে বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত তথ্য প্রকাশ করেননি।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর সংঘটিত জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন। এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দেন, ভারত এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেবে, এবং তিনি সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন।
এরপর মধ্যরাতে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালায়। পাকিস্তানও হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে, তবে তাদের দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় বিমান হামলায় তাদের সাধারণ নাগরিকেরা নিহত হয়েছেন। ভারত শুরু থেকেই স্পষ্ট করে জানিয়ে এসেছে, এই হামলার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি, এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো পরিকাঠামোর ওপর আঘাত হানা হয়নি।
বহওয়ালপুর শহরের জইশ ঘাঁটির পাশাপাশি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলিতেও অভিযান চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। সেই হামলায় নিহত হন লশকর-এ-ত্যায়বার ধর্মীয় প্রচারক মহম্মদ ইকবাল। ভারত বারবার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই হামলায় কোনো সাধারণ নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। তবে ভারতের এই হামলার পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন, জানিয়ে দেন যে পাকিস্তান চুপচাপ বসে থাকবে না এবং এর উপযুক্ত জবাব দেবে।
Comments are closed.