স্পষ্ট হচ্ছে পাক যোগ! পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী পাক সেনার প্রাক্তন কমান্ডো?

15

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ এপ্রিল: পহেলগাঁও হামলায় পাকিস্তান সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, হামলার মূল অভিযুক্ত হাশিম মুসা দীর্ঘদিন পাকিস্তান সেনার স্পেশাল ফোর্সের সদস্য ছিল। পরে সে লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত হয়।

সূত্রের দাবি, গত অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে মোট তিনটি জঙ্গি হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল হাশিম। পহেলগাঁও হামলায় তার ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতের অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।

বৈসরনে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই ১৫ জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের জেরা চলছে, এবং গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্যগুলি হামলার পরিকল্পনা, স্থানীয় স্তরে মদতদাতাদের ভূমিকা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

পহেলগাঁও হামলার পর তদন্তে উঠে এসেছে যে, মূল অভিযুক্ত হাশিম মুসার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পাকিস্তান সেনার বিশেষ বাহিনী স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)-এর সঙ্গে। এই এলিট কমান্ডো ইউনিটের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত সক্ষম করে তোলা হয়। তদন্তে জানা গেছে, এসএসজিতে হাশিমকে শুধু উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি, সঙ্গে ছিল অস্ত্র ছাড়াও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কৌশল, কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার পদ্ধতি এবং নিখুঁত দিকনির্ণয়ের দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ। এই উচ্চমাত্রার সামরিক প্রশিক্ষণই তাকে ভয়ঙ্কর ও পরিকল্পিত হামলা চালাতে সক্ষম করে তোলে বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তাবাহিনী ও কাশ্মীরি নন—এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাশিম মুসাকে। শুধু পহেলগাঁও হামলাই নয়, বরং গত বছর বারামুলা-সহ কাশ্মীরের আরও দুটি জায়গায় সংঘটিত হামলার নেপথ্যেও এই কট্টরপন্থী পাকিস্তানি জঙ্গির ভূমিকা ছিল বলে দাবি গোয়েন্দা সূত্রের। তদন্তকারীদের ধারণা, হামলার রুট, সময় এবং কৌশল—সব কিছুর একটি সুপরিকল্পিত নীল নকশা (ব্লুপ্রিন্ট) তৈরি করেছিল মুসা নিজেই। তার প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মুসা ও তার সহ-জঙ্গিরা অত্যন্ত সুচারুভাবে এই হামলাগুলি বাস্তবায়িত করে। এই তথ্য সামনে আসায় মুসার সামরিক প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত দক্ষতা তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যে জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে হাশিম মুসার পাশাপাশি রয়েছে আরও দুই জঙ্গি—আলি ভাই ওরফে তালহা এবং স্থানীয় কাশ্মীরি জঙ্গি আদিল ঠোকর। গোয়েন্দা মহলের সন্দেহ, লস্কর-ই-তইবা মুসার প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণের কথা মাথায় রেখেই তাকে হামলার মূল দায়িত্বে নিয়োজিত করেছে। এই তিনজনের মধ্যে মুসাই মূল পরিকল্পক ও অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার সামরিক প্রশিক্ষণ ও স্ট্র্যাটেজিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠিতভাবে হামলার ছক সাজানো হয়েছিল। তদন্তকারীরা এখন মুসা এবং তার সঙ্গীদের গতিবিধি ও সংযোগসূত্র খতিয়ে দেখছেন।

সূত্রের খবর, পহেলগাঁও হামলায় একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জড়িত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যারা ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ (OGW) হিসেবে জঙ্গিদের সহায়তা করত। পুলিশের সন্দেহ, এই ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কাররাই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে, হামলাস্থলে পৌঁছে দিয়েছে এবং পহেলগাঁওয়ে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ইতিমধ্যেই তেমন কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে খতিয়ে দেখছে, এলাকায় আরও কতজন ব্যক্তি ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার হিসেবে সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ জন স্থানীয় জঙ্গিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অভিযান। ১০ জনের বেশি জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেনার তরফে।

উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন নেপালি পর্যটক। এই হামলার পর থেকেই উপত্যকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

Comments are closed.