Parliament News: SIR ঘিরে পর পর সংসদের ভিতরে বাইরে বিক্ষোভ দেখাল ‘ইন্ডিয়া’জোট

84

ডিজিটাল ডেস্ক ২৫শে জুলাইঃ বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারও সরব বিরোধীরা। এদিন সংসদের বাইরেও বিক্ষোভ দেখায় বিরোধী জোট। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রায় সব দলের সদস্যরা সংসদ চত্বরে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা এসআইআর-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভে যোগ দেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সোনিয়া গান্ধি (Parliament News)।

এদিন বিরোধী বিক্ষোভের জেরে প্রথমে দুপুর ২টা পর্যন্ত লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। পরে অধিবেশন শুরু হলেও হট্টগোল চলতে থাকে। পরে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘এই কাজ সভার গরিমাকে নষ্ট করছে।’ যদিও দ্রুত বিহারে ভোটার তালিকায় এসআইআরের কাজ স্থগিত করার দাবিতে অনড় বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি বলেন, ‘এটা খুবই গুরুতর একটি বিষয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশনের মতো কাজ করছে না।’ এদিকে ভোটার তালিকায় সমীক্ষা নিয়ে বিরোধী বিক্ষোভে শামিল হলেও বাংলা এবং বাঙালি প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছে তৃণমূল।

৫৬ লক্ষের নাম বাদ যাওয়া প্রভাব ফেলতে পারে ভোটে-

বিহারে মোট বিধানসভা আসন ২৪৩। ৫৬ লক্ষের নাম বাদ যাওয়ার অর্থ প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গড়ে ২৩ হাজার ৪৫ জনের নাম বাদ পড়বে। নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

২০২০ সালের নির্বাচনে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি ৫২টি আসনে ৫০০০ হাজারের কম ভোটে পরাজিত হয়েছিল। আর ৪০টি আসনে সাড়ে তিন হাজারের কম ভোটে হারে তারা।

ওই নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল আরজেডি। ৭৫টি আসনে জিতেছিলেন আরজেডি প্রার্থীরা। বিহারে সরকার গড়তে প্রয়োজন ১২৩ জন বিধায়কের সমর্থন। জোট সঙ্গীদের ব্যর্থতার জন্য সরকার গড়তে পারেনি তারা। আরজেডি-র নেতৃত্বে জোট পেয়েছিল ১১০টি আসন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ২৩ হাজার ভোটারের নাম বাদ যাওয়ায় ভোটের ফল বদলে যেতে পারে।

বিরোধীরা কি ভোট বয়কটের পথে হাঁটবে?

নির্বাচন কমিশনের এই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, দরিদ্র ও পরিযায়ী ভোটারদের টার্গেট করেছে কমিশন। বিহার বিধানসভার বাদল অধিবেশনে বিরোধীরা এই নিয়ে সরব হন। আবার কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব।

লালুপুত্র তেজস্বী যাদব বলেন, “কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা অর্থহীন।” বিজেপিকে তোপ দেগে তাঁর বক্তব্য, “ভুয়ো ভোটার তালিকা ব্যবহার করে বিজেপি যদি সরকার চালাতে চায়, তাহলে তাদের সরকারের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হোক। যদি পুরো প্রক্রিয়াই অসৎ হয়, তাহলে নির্বাচনের দরকার কি?”

তাঁরা কি ভোট বয়কট করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তেজস্বী বলেন, “বয়কট একটা অপশন। কিন্তু, আমরা তা নিয়ে ভাবব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের জোটসঙ্গী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলব।” বিরোধীদের উদ্বেগ নিয়ে কমিশন কোনও বক্তব্য রাখছে না বলে তোপ তাগেন তেজস্বী। তিনি দাবি করেন, প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। কমিশনকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আগে ভোটাররা সরকার নির্বাচিত করত। এখন সরকার ভোটার বেছে নেয়।”

বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলি একযোগে সরব হয়েছে। সংসদেও এই নিয়ে সরব হয়েছে তারা। আবার পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বিহারের মতো বাংলায় ভোটার তালিকা সংশোধন হলে রাস্তায় নামবে তারা। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “নির্বাচন কমিশন বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে । বিজেপির লোক বেছে বেছে কমিশনে রাখা হচ্ছে। এখন ভোটের অধিকার কাড়তে চাইছে। এভাবে চললে নির্বাচন কমিশনের উপর বিশ্বাস চলে যাবে।” বাংলার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিজেপিকে জেতাতে দেখে দেখে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।”

কী বলছে বিজেপি?

ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। একইসঙ্গে তেজস্বী যাদবের ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষ করেছে। বিহার বিজেপি এক বিবৃতি বলে, “হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচন এড়াতে চাইছেন তেজস্বী। নির্বাচন বয়কট করার কারণ খুঁজছেন তিনি।” মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে SIR প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে বলে বিজেপির দাবি।

কমিশনের এই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা চলছে। শীর্ষ আদালত কমিশনকে তার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু, এই সময় ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কমিশন যুক্তি দিয়েছে, গোটা প্রক্রিয়াটি একটি সুসংহত এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। সমস্ত যোগ্য ভোটারের নাম তালিকায় থাকবে বলে কমিশন জানিয়েছে। প্রকৃত ভোটার হওয়ার পরও যদি কারও নাম বাদ যায়, তবে তিনি নিজের নাম তালিকায় তোলার পরে সুযোগ পাবেন বলে কমিশন জানিয়েছে। এখন দেখার, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর বিরোধীরা কী অবস্থান নেয়।