ডিজিটাল ডেস্ক, ২ মে: কেরলে নতুন বন্দর উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিরুঅনন্তপুরমের ভিঝিনজাম বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে মোদি মন্তব্য করেন, এই বন্দর এমন এক দিক উন্মোচন করতে চলেছে যা বিরোধী শিবিরের রাতের ঘুম কাড়বে। আদানি গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে এই বন্দরটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও। আর সেখান থেকেই মোদি তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তাও দিয়ে যান।
ভিঝিনজাম বন্দরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কটাক্ষ ছুড়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে বলব, আপনি তো ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম স্তম্ভ। শশী থারুরও এখানে উপস্থিত। আজকের এই অনুষ্ঠান অনেকের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে।” মোদির এই মন্তব্য অনুবাদ করতে কিছুটা সময় নেন অনুবাদক। তা দেখে প্রধানমন্ত্রী রসিকতা করে বলেন, “যাঁদের উদ্দেশে বার্তা ছিল, তা ঠিক জায়গায় পৌঁছেছে।” পাশাপাশি তিনি জানান, দেশের নৌবাহিনীর শক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এই বন্দর সেই শক্তিকে আরও দৃঢ় করবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভিঝিনজাম বন্দরটি কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের লোকসভা কেন্দ্র তিরুঅনন্তপুরমের অন্তর্গত। ফলে নিজের কেন্দ্রের এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের উদ্বোধন উপলক্ষে ‘অতিথি’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নিজেই হাজির ছিলেন থারুর। আর তাতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেসের অন্দরে অনেকেই তাঁর এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দলের অবস্থানের সঙ্গে বারবার মতবিরোধে জড়াতে দেখা যাচ্ছে শশী থারুরকে। কোভিড পরিস্থিতির সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্ব এবং ভারতের তৈরি ভ্যাকসিনকে প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি নিজের এক কলামে। সেই বক্তব্যেও কংগ্রেস নেতৃত্বের অস্বস্তি বেড়েছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনাগুলি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অনেকেরই মত, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্যের মাধ্যমে এক দিকে যেমন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-তে বিভাজনের সুর চড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, তেমনই কংগ্রেসের অন্দরে শশী থারুরের অবস্থান আরও জটিল করে তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক বার্তাই নয়, বরং শাসক ও বিরোধীর সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যেও আঘাত।
ঘটনাচক্রে, উদ্বোধনী ফলকে স্থানীয় সাংসদ হিসাবে শশী থারুরের নামও উল্লেখ রয়েছে, যা মোদীর মন্তব্যকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। এটি এক প্রকার রাজনৈতিক কৌশল, যা থারুরের প্রতি কংগ্রেসের ভেতরের মনোভাব ও বিরোধী শিবিরের অস্বস্তি—উভয়ই বাড়িয়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের প্রশংসা করে শিরোনামে এসেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। তাঁর সেই মন্তব্য ঘিরে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠে যায়। ওই সময় থারুর ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেছিলেন, তিনি সবসময় কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে দল যদি তাঁর প্রয়োজন না মনে করে, তাহলে তাঁর হাতে করার মতো ‘অনেক কিছু’ রয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, দলবদলের কোনও পরিকল্পনা আপাতত তাঁর নেই।
পহেলগাঁও হামলার পরেও কেন্দ্রের অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন প্রাক্তন কূটনীতিক ও কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে গোটা বিশ্ব যে নজর রেখে চলেছে, সে কথাও স্পষ্টভাবে জানান তিনি। থারুরের এই দলবিরোধী অবস্থান ঘিরে ফের প্রশ্ন উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কেরল সফর ঘিরে থারুরের সক্রিয় উপস্থিতি, আর তার মাঝেই মোদীর ‘ঘুম উড়ে যাবে’ মন্তব্য—সব মিলিয়ে কংগ্রেসের অস্বস্তি যে আরও বেড়েছে, তা স্পষ্ট বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
Comments are closed.