Puri Stampede Death : একের পর এক বিপর্যয়, পুরীতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৩, উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ধসে পড়ল নির্মীয়মাণ হোটেল, নিখোঁজ ৯

4

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ জুন : পুরীর রথযাত্রায় আবারও বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হল পুলিশ প্রশাসন, যার ফলে গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় অন্তত ৩ জন পুণ্যার্থী প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন (Puri Stampede Death)।

স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোর সাড়ে চারটা থেকেই গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, এদিনই প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথ থেকে মন্দিরে আনা হয়। সেই দৃশ্য দেখার আশায় হাজার হাজার মানুষ মন্দির চত্বরে উপস্থিত হন। সংকীর্ণ এলাকায় এত মানুষের জমায়েতে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই রীতি পালনের সামগ্রী নিয়ে একটি গাড়ি মন্দিরের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ করে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে ভেঙে পড়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণে তৈরি ব্যারিকেড এবং সৃষ্টি হয় পদপিষ্ট হওয়ার ভয়াবহ পরিস্থিতি।

পুলিশ জানিয়েছে, ভোর ৪টা ২০ মিনিট নাগাদ গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে। দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ, এবং আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত তিনজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে—বাসন্তী সাহু, প্রমকান্ত মোহান্তি ও প্রভাতী দাস—তাঁরা সকলেই খুরদা জেলার বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এবং পুলিশ কর্মীর সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। ঘটনার পর ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন শোকপ্রকাশ করেন এবং জানান, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কড়া বার্তা, “যাঁদের গাফিলতিতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

গত শুক্রবারও রথযাত্রার সময় একই ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, যখন অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং রথ নির্ধারিত সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছনোয় যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হয়। রবিবার ভোরেও সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে—ফের পদপিষ্টের ঘটনা এবং ফের প্রাণহানি। এই ঘটনায় ফের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বিজেপি শাসিত ওড়িশা সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। প্রশাসনের তরফে যদিও দায় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিড়ের ওপর। রাজ্যের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি ভক্ত এবারে পুরীতে এসেছেন। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার বারকোট তহশিলের পলিগাড়-সিলাইব্যান্ড অঞ্চলে গভীর রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। রবিবার রাত প্রায় ২টো নাগাদ প্রবল বৃষ্টিপাতে এক নির্মীয়মাণ হোটেল ভেঙে পড়ে, এবং জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৯ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। পাহাড় থেকে ধস নামার ফলে উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটলেও তৎপর রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF) এবং পুলিশ। উত্তরকাশীর জেলাশাসক প্রশান্ত আর্য জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে একাধিক জেলায় ধস নামার ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবারের প্রবল বৃষ্টির কারণে রুদ্রপ্রয়াগ জেলার সোনপ্রয়াগ-মুনকটিয়া রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই রাস্তাটি কেদারনাথের তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ বলে মনে করা হয়।

উত্তরাখণ্ডজুড়ে লাগাতার বৃষ্টিপাতের প্রভাবে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। শনিবার সকালে ধস নামে বদ্রীনাথ–ঋষিকেশ জাতীয় সড়কে, ফলে কেদারনাথ তীর্থপথ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। সড়কের বিপজ্জনক অংশে দুর্ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী, যাতে কেউ ঝুঁকি নিয়ে সেখানে না যান। ধস সরানোর কাজ শুরু হলেও টানা বৃষ্টির জন্য তা বারবার ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তার বিভিন্ন অংশে বারবার নতুন করে ধস নামায় উদ্ধার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ আরও জটিল হয়ে পড়ছে।

প্রবল বৃষ্টির সতর্কতার কারণে একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে চারধাম যাত্রা। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) রবিবার ও সোমবার উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং ঝড়ের সম্ভাবনায় লাল সতর্কতা জারি করেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তরকাশীর জেলাশাসক প্রশান্ত আর্য। তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, চারধাম যাত্রা ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় তীর্থযাত্রা, যেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্ত যমুনোত্রি, গঙ্গোত্রি, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ দর্শনের উদ্দেশ্যে আসেন। এই যাত্রা সাধারণত দীপাবলির পর বন্ধ হয়ে যায় এবং ফের এপ্রিল-মে মাসে শুরু হয়, যা ছয় মাসব্যাপী চলে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু তীর্থযাত্রী এই যাত্রায় অংশ নেন।