ডিজিটাল ডেস্ক, ২৩ মে : পরনে টি-শার্ট, জিন্স, মুখে মাস্ক। গলায় রজনীগন্ধা, গোলাপ ও গাঁদার মালা। হাওড়া স্টেশনে উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড়ে কিছুটা অপ্রস্তুত পূর্ণম সাউ। ভিড় সরিয়ে এক প্রৌঢ় এগিয়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন—বাবা-ছেলের চোখে তখন জল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার মুহূর্তেও তাঁকে ঘিরে ছিল উত্তেজিত জনতা। উঠল ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি। সকলকে নমস্কার জানালেন পূর্ণম, তবে কোনও মন্তব্য করেননি। এরপর গাড়ি ছুটল রিষড়ার দিকে—অবশেষে বাড়ি ফিরলেন তিনি (Purnam Shaw Returns Home)।
হুগলির রিষড়া বাগখাল এলাকায় বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। ‘ওয়েলকাম’ লেখা বিশাল গেট তৈরি করা হয়েছে তাঁর সম্মানে। তিন সপ্তাহ পাকিস্তানে বন্দি থাকার পর দেশে ফিরে আসা পূর্ণমকে নিয়ে বিশেষ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। হুডখোলা গাড়ি সাজানো হয় তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য। ব্যান্ড পার্টির সঙ্গে বাগখাল থেকে র্যালি করে তাঁকে তাঁর বাসভবন ‘সাউ সদন’-এ নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িটি আলো দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ রাঁধুনি ডেকে রান্নার আয়োজন করা হয়েছে, তবে আজ নিরামিষ খাবারই পরিবেশন করা হবে। পূর্ণমের জন্য বিশেষভাবে আনা হয়েছে কেক, পাশাপাশি তাঁর পছন্দের লুচি-তরকারিও পরিবেশিত হবে। তাঁর ফিরে আসা উপলক্ষে গোটা এলাকায় আনন্দের জোয়ার বইছে।
গত ২৩ এপ্রিল, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পরদিন, পঞ্জাবের পঠানকোটে দায়িত্ব পালন করছিলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। অসাবধানতাবশত সীমান্ত পেরিয়ে তিনি পাকিস্তানে প্রবেশ করেন এবং গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করে। সাধারণত, সীমান্ত পেরিয়ে এই ধরনের ঘটনায় ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পাকিস্তান সেসময় তাঁকে ছাড়েনি। অবশেষে ২২ দিন পর, গত বুধবার পাক সেনা তাঁকে মুক্তি দেয় এবং অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। ভারতে ফিরে আসার পর, ভিডিয়ো কলে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন পূর্ণম। কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলেও তখনই বাড়ি ফেরার অনুমতি পাননি। তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয় এবং কিছু সরকারি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে, অবশেষে তিনি বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র পান।
হাওড়া থেকে হুগলি যাওয়ার পথে লিলুয়ায় একটি দোকানের সামনে সংক্ষিপ্ত বিরতি নেয় পূর্ণমের গাড়ি। সেখানে মিষ্টিমুখ করার পর বিএসএফ কনস্টেবল আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। সকলের আশীর্বাদে যেন আমার দ্বিতীয় জন্ম হলো। পরিবারের সবার মুখ দেখার সুযোগ পেলাম।” বাড়ি ফেরার আগে পূর্ণম আরও জানান, “আমাদের জওয়ানদের ভয় পাওয়া চলে না। আমরা দিনরাত এক করে সীমান্ত পাহারা দিই। যদি আমরা ভয় পাই, তবে দেশবাসীর কী হবে! আমি কখনও ভয় পাইনি, তবে বাড়ির জন্য অবশ্যই চিন্তা হয়েছিল।
Comments are closed.