Raj Thackeray And Uddhav Thackeray : বিজেপির বিরুদ্ধে দু’দশক বাদে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে দুই ঠাকরের হুঙ্কার!
ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ জুলাই : মারাঠা রাজনীতিতে বড়সড় পালাবদল—দু’দশক পর ফের একমঞ্চে উঠে এলেন উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ ঠাকরে (Raj Thackeray And Uddhav Thackeray)। মারাঠি আত্মপরিচয়ের দাবি ঘিরেই মিটল দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব। বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ও ভাইপো রাজ, দুই ঠাকরে-ই একসঙ্গে এসে যে বার্তা দিলেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘ ২০ বছর বাদে দুই ভাইয়ের এই ঐক্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। দুই নেতাই কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন—তাঁদের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এখন বিজেপি। এই নতুন সমীকরণ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ঠাকরে পরিবারে দুই দশকের পুরনো রাজনৈতিক দূরত্ব যেন অবশেষে সেতুবন্ধন পেল। ২০০৫ সালে শিব সেনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রাজ ঠাকরে, আর ২০০৬ সালে গড়ে তুলেছিলেন নিজের দল। তখন থেকেই দুই ভাইপোর মধ্যে ছায়াস্পর্শের সম্পর্কটুকুও দেখা যায়নি। পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাঁরা একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করতেন। কিন্তু শনিবার মুম্বইয়ের জনসভায় নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল মহারাষ্ট্র। একমঞ্চে দেখা দিলেন উদ্ধব ও রাজ ঠাকরে—শুধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুলেই থেমে থাকেননি, আগামী দিনে একযোগে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সংকল্পও ব্যক্ত করলেন।
ত্রিভাষা’ নীতির বিরোধিতা যেন এক নতুন মোড় এনে দিল মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে। রাজ্য সরকার হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়ার পরই প্রতিবাদে একযোগে মুখ খোলেন রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরে। এ নিয়ে প্রথমবার শিব সেনা (উদ্ধব) ও মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা একই মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ জানায়। চাপে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছে সরকার। তবে শনিবারের জনসভা প্রমাণ করে দিল—রাজনীতির সমীকরণ বদলে যেতে শুরু করেছে। দুই ভাই রাজ ও উদ্ধব শুধু একসঙ্গে হাজিরই হননি, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—মহারাষ্ট্র ও মারাঠি জনগণের স্বার্থের জন্য অতীতের বিবাদ তারা ভুলে যেতে প্রস্তুত। উদ্ধব বলেন, “আমরা আজ একমঞ্চে এসেছি, এটাই খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো—আমরা একসঙ্গে থাকব, লড়াই করব।”
একসুরে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিসকে কটাক্ষ করলেন ঠাকরে পরিবারের দুই ভাই। রাজ ঠাকরে মন্তব্য করেন, “যে কাজটা বালাসাহেব ঠাকরে বা অন্য অনেকেই করতে পারেননি, সেটা করে দেখিয়েছেন ফড়ণবিস। আমাদের এক করে দিয়েছেন।” তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট, ফড়ণবিসের নীতিই ঠাকরে পরিবারকে ফের কাছাকাছি আনতে ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে উদ্ধব ঠাকরে বলেন, “বিজেপি গোটা দেশকে এক ছাঁচে ফেলতে চাইছে। হিন্দু বা হিন্দুস্তান নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু হিন্দির আধিপত্য আমরা মানব না। আর হিন্দুত্বের পাঠ বিজেপির কাছ থেকে আমাদের নেওয়ারও প্রয়োজন নেই।” দুই ভাইয়ের এই কঠোর বার্তা শুধু রাজনৈতিক মতবিরোধ নয়, বরং মারাঠি আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে একজোট হয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো জল্পনা—বৃহন্মুম্বই পুরনিগম নির্বাচনে একসঙ্গে লড়তে চলেছে উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) এবং রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। আসলে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে দুই দলই মুখ থুবড়ে পড়েছে। উদ্ধব ঠাকরে কোনোমতে মুম্বইয়ে নিজের রাজনৈতিক ভিত ধরে রাখতে পেরেছেন, অথচ রাজ ঠাকরে পর্যন্ত নিজের ছেলেকেও জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই অবস্থায় অস্তিত্ব রক্ষা করাটাই যেন প্রথম লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে দুই দলের কাছে। তাই দীর্ঘদিনের পারিবারিক দূরত্ব ও রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে ঠাকরে পরিবার ফের এক ছাতার তলায় একত্র হতে চলেছে—এমন সম্ভাবনা এখন আর অবাস্তব বলেই মনে করছেন না অনেকে।