Shubhanshu Shukla Returning To Earth : কোন প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে নামছে শুভাংশুদের ক্যাপসুল? শুরু ‘আনডকিং’, মহাকাশকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হল ক্যাপসুল
ডিজিটাল ডেস্ক, ১৪ জুলাই : একটানা ১৪ দিন মহাকাশে কাটিয়ে অবশেষে সোমবার পৃথিবীর উদ্দেশে ফিরছেন অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানের মহাকাশচারীরা। শুরু হয়ে গেল ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর পথে যাত্রা শুরু করলেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্ল ও তাঁর সঙ্গীরা। নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে, ভারতীয় সময় অনুযায়ী বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে মহাকাশযানটি স্পেস স্টেশন থেকে আলাদা হয়। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে, আগামীকাল ভারতীয় সময় দুপুর ৩টা নাগাদ ক্যাপসুলটি অবতরণ করবে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে, প্রশান্ত মহাসাগরের জলে। এবার অপেক্ষা সেই ঐতিহাসিক ‘স্প্ল্যাশডাউন’ মুহূর্তের (Shubhanshu Shukla Returning To Earth)।
গত ২৬ জুন ইতিহাস গড়েছিলেন ভারতীয় নভোচারী শুভাংশু শুক্লা। অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি তিনজন আন্তর্জাতিক সহকর্মীর সঙ্গে সফলভাবে পৌঁছান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS)। সেখানে গত কয়েকদিন ধরে মহাকাশে নানা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন তিনি। এবার শুরু হয়েছে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি। ‘স্প্ল্যাশডাউন’—অর্থাৎ মহাকাশযানের সমুদ্রে অবতরণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরবেন শুভাংশুরা। নাসা জানিয়েছে, এই গোটা প্রত্যাবর্তনের অভিযান তারা সরাসরি সম্প্রচার করবে তাদের ওয়েবসাইটে। ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে ইতিহাস গড়া শুভাংশু কীভাবে পৃথিবীতে ফিরছেন, সেই প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও প্রকাশ করেছে নাসা। সব ঠিকঠাক থাকলে ১৫ জুলাই দুপুর ৩টা ১ মিনিটে প্রশান্ত মহাসাগরে নামবে তাঁদের ক্যাপসুল—আর সেখান থেকেই শুরু হবে এই মাইলফলক মুহূর্তের নতুন অধ্যায়।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, যেই ‘ড্র্যাগন’ মহাকাশযানে চড়ে শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর সঙ্গীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পৌঁছেছিলেন, সেই একই যানেই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। মহাকাশযানটির ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে, যার মাধ্যমে এটি ISS থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করবে। এরপর শুরু হবে ‘রেট্রোগ্রেড বার্ন’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পর্যায়ে মহাকাশযানের গতি কমাতে বিশেষভাবে রকেট ইঞ্জিন জ্বালানো হয়, যাতে যানটি নিরাপদভাবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে। এই সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়াই নিশ্চিত করে যে ক্যাপসুলটি নির্ধারিত পথে সঠিক গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকতে পারে, এবং সফলভাবে ‘স্প্ল্যাশডাউন’ সম্পন্ন হয়।
শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর সঙ্গীদের পৃথিবীতে ফেরার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের মুহূর্ত। এই সময় ক্যাপসুলটির গায়ে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়, যার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেশি। সেই তাপ সামলাতে এবং নিরাপদ অবতরণের জন্য ক্যাপসুলের গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়। শুরুতে ক্যাপসুলটি ঘন্টার প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটতে থাকে। সেই গতি ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয় মাত্র ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা-এ। এরপর নির্ধারিত উচ্চতায় পৌঁছলে খুলে যায় দুটি বড় প্যারাশুট, যা ক্যাপসুলের গতিকে আরও শ্লথ করে দেয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই পুরো প্রক্রিয়া শেষে শুভাংশু ও তাঁর সহযাত্রীদের ক্যাপসুল ধীরে ধীরে অবতরণ করবে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলসংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের জলে—একটি সফল ‘স্প্ল্যাশডাউন’-এর মাধ্যমে।