Shubhanshu Shukla Splash Down : শুভাংশুদের সফল অবতররণ! ১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন শুভাংশু শুক্লা-সহ চার নভশ্চর
ডিজিটাল ডেস্ক, ১৫ জুলাই : অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছল ইতিহাস! ভারতীয় সময় অনুযায়ী দুপুর ৩টে ১ মিনিটে, শুভাংশু শুক্লা-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে সফলভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে স্প্ল্যাশডাউন করল স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। শান্ত জলরাশিতে ভেসে উঠল বহু প্রতীক্ষিত সেই ক্যাপসুল (Shubhanshu Shukla Splash Down)।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে পৃথিবীর উদ্দেশে ফিরলেন শুভাংশু শুক্লাও তাঁর সহযাত্রীরা। যদিও সেই সময় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে রাত। ইতিমধ্যেই তাঁদের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’ প্রবেশ করেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে।
এই পর্যায়ে ক্যাপসুল তীব্র তাপ ও ঘর্ষণের মুখে পড়ে, কারণ বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এর গতি থাকে ঘণ্টায় প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ধীরে ধীরে সেই গতি কমতে শুরু করে এবং অবতরণের ঠিক আগে নেমে আসে প্রায় ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এই ধাপে ক্যাপসুলকে নিরাপদে নামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় তাপ প্রতিরোধক ঢাল ও প্যারাশুট সিস্টেম।
প্রশান্ত মহাসাগরে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে ‘রিকভারি ভেহিকল’, প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে স্পেসএক্সের উদ্ধারকারী দলও। স্প্ল্যাশডাউনের ঠিক পরেই তারা দ্রুত পৌঁছে যাবে শুভাংশু শুক্লদের ক্যাপসুলের কাছে। সেখান থেকে ক্যাপসুলটিকে জাহাজে তোলা হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কিছু সময় পর ক্যাপসুলের হ্যাচ খুলে দেওয়া হবে, এবং একে একে বাইরে আনা হবে চার নভশ্চরকে। এরপর শুরু হবে প্রাথমিক মেডিক্যাল পরীক্ষা, যাতে তাঁদের শারীরিক অবস্থা ও মহাকাশযাত্রার প্রভাব দ্রুত মূল্যায়ন করা যায়।
শুভাংশুর এই যাত্রা ঐতিহাসিক বলেই মনে করা হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশ গিয়েছিলেন। তাঁর কীর্তিকে এবার স্পর্শ করলেন শুভাংশু। সময়ের হিসেবে রাকেশের থেকে অনেকটা বেশি সময় তিনি থাকলেন অন্তরীক্ষে। পাশাপাশি তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেলেন।
অ্যাক্সিয়ম স্পেসের তরফে জানানো হয়েছে, গত ১৮ দিন ধরে মহাকাশে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়েছেন শুভাংশু শুক্ল এবং তাঁর সহযাত্রী—মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন, স্লাভোস উজনানস্কি এবং তিবোর কাপু। এই সময়ের মধ্যে শুভাংশু একাই সম্পন্ন করেছেন সাতটি ভারত-কেন্দ্রিক মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরীক্ষা। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে চাঁদ কিংবা অন্যান্য গ্রহে মানুষের অভিযান পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের গগনযান প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে এই মিশন এক ঐতিহাসিক সূচনা। প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য—২০৪০ সালের মধ্যে ভারতীয় নভশ্চরকে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করানো। সেই দীর্ঘ ও জটিল অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শুভাংশুর এই যাত্রাকে দেখা হচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে।
এই মিশনের জন্য ভারতের খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮০ কোটি টাকা (প্রায় ৭ কোটি ডলার)। গড়ে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের পক্ষ থেকে প্রায় ৪ টাকা খরচ হয়েছে এই অভিযানের জন্য। তবে এই বিনিয়োগ শুধু একবারের মহাকাশ ভ্রমণের জন্য নয়—এটা ভবিষ্যতের বহু মিশনের ভিত তৈরি করছে। শুভাংশুর অভিজ্ঞতা ও ডেটা বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের ভারতীয় মহাকাশ মানব অভিযানের রূপরেখা নির্ধারিত হবে।
২৫ জুন, নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযানে করে যাত্রা শুরু করেছিলেন শুভাংশুরা। এই মিশনের পাইলট ছিলেন শুভাংশু শুক্ল নিজেই। ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর তিনিই দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দিলেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখলেন। ২৮ জুন মহাকাশ থেকেই ভিডিও কলে শুভাংশুর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী—যা ছিল এই মিশনের আর এক স্মরণীয় মুহূর্ত।