ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ জুলাই : এসএসসি-র নতুন নিয়ম সংক্রান্ত মামলায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রইল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ সোমবার জানিয়ে দেয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তারা কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না। এর ফলে ২০২৫ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে নতুন বিধি মেনেই (SSC Recruitment Update)।
বিচারপতি সঞ্জয় কুমার বলেন, “যারা অযোগ্য, তারা এমনিতেই বাদ পড়েছে। তারা আর পরীক্ষায় বসছে না। আর যারা যোগ্য কিন্তু চাকরি হারিয়েছেন, তারা যদি পরীক্ষায় কিছুটা বাড়তি সুযোগ পান, তাতে সমস্যা কী? তাঁদের তো পড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা কোথাও বলিনি যে নিয়ম স্থায়ীভাবে অপরিবর্তনীয়। নতুন নিয়ম প্রণয়নের অধিকার এসএসসির রয়েছে। আমরা কখনও বলিনি কোন নিয়ম মেনে নিয়োগ হবে।” এই যুক্তি দেখিয়েই সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করল না।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। এর জেরে ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি খারিজ হয়ে যায়। ২০২৪ সালে সেই রায় দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ, যার সদস্য ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমারও। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই এসএসসি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে সেই বিজ্ঞপ্তির কয়েকটি শর্ত নিয়ে আপত্তি তোলেন কিছু প্রার্থী, বিশেষ করে যাঁরা আগের ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, নতুন নিয়োগ যেন পুরনো নিয়ম মেনেই হয়। এই দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন তাঁরা।
কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলাগুলিও খারিজ করে দেয়। আদালতের স্পষ্ট মন্তব্য ছিল, “কমিশন ও পর্ষদ এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী হলেও, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দ্রুত শূন্যপদ পূরণ করা। না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও জটিল হবে।” এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। তবে শীর্ষ আদালতও তাঁদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেনি।
সোমবারের শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার স্পষ্টভাবে বলেন, “এসএসসি একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। কীভাবে নিয়োগ হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের আছে। আমরা শুধু বলেছিলাম, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে। কোনও নির্দিষ্ট নিয়োগ বিধি চাপিয়ে দিইনি।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিলের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, তিনি নিজেই সেই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। তাঁর মন্তব্য, “সেই সময় আমরা তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করেই রায় দিয়েছিলাম। তখন যেমন সহমত ছিলাম, এখনও আছি। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আপনাদের বর্তমান দাবি মানা যায় না।”
মামলাকারীরা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বলে দাবি করলেও, আদালত তাঁদের যুক্তিকে মান্যতা দেয়নি। বিচারপতিরা পর্যবেক্ষণে বলেন, “আপনারা নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হননি। না তো যোগ্যদের তালিকায় আছেন, না অযোগ্যদের। তাহলে আপনারা কী দাবি করছেন?” এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, আদালত চায় দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা কাটিয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হোক।