State Election Commission Autonomous : ২৬-এর ভোটের আগে বড় ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের! রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী দফতরকে স্বশাসিত ঘোষণার নির্দেশ

19

ডিজিটাল ডেস্ক, ২২ জুলাই : বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে বিতর্কের আবহে এবার বাংলায় বড় পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে রাজ্য সরকারের আওতার বাইরে এনে স্বতন্ত্র করে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন (State Election Commission Autonomous)।

এই নির্দেশের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর আর রাজ্য সরকারের অধীনে থাকছে না। এতদিন পর্যন্ত এই দফতর রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনেই পরিচালিত হতো। তবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রতিটি রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত। সেই যুক্তিতেই এই সিদ্ধান্ত, এবং সেই সূত্রেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য—মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে রাজ্য সরকারের আর্থিক নির্ভরতা থেকে মুক্ত করা। দফতরকে স্বতন্ত্র করা হলে প্রশাসনিক ও আর্থিক দিক থেকে আরও বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন তিনি। এমনকি ভবিষ্যতে এই দফতর নিজস্বভাবে কর্মী নিয়োগেরও অধিকার পাবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আরও কার্যকর হতে পারে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দেশের ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ করছে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আধার, ভোটার আইডি কিংবা রেশন কার্ড—এই ধরনের নথিগুলি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। তাই এগুলিকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য বাধ্যতামূলক বা চূড়ান্ত নথি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কমিশনের মতে, ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—ব্যক্তি যেন ভারতের নাগরিক হন। সেই কারণে নাগরিকত্ব যাচাই করাই কমিশনের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

অন্যদিকে, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বেছে বেছে অনেকের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলছে বিভিন্ন মহল। এর জবাবে নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ভোটার রেজিস্ট্রেশন অফিসার যদি মনে করেন, কোনও ব্যক্তির তালিকায় নাম রাখার যোগ্যতা নেই, তাহলেই তাঁর নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়ায় কোনও পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য নেই।

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আসলে ঘুরপথে এনআরসি চালুর প্রয়াস। তাদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে বিরোধী সমর্থক ও সংখ্যালঘু ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গেই একদিন আগেই একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ মঞ্চ থেকে তীব্র ভাষায় সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “যেভাবে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিচ্ছে, তা একপ্রকার ‘সুপার এমার্জেন্সি’। বাংলার একজন নাগরিকের নামও যদি তালিকা থেকে বাদ পড়ে, তাহলে রাজপথে আন্দোলন হবে। প্রয়োজনে দিল্লিরাজের পতন ঘটাতে হবে, দিল্লি গিয়েও আন্দোলন চলবে। এমনকি কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করা হবে।”

এই হুঁশিয়ারির মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনও সমীক্ষা বা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয়। ঠিক এর পরদিনই জাতীয় নির্বাচন কমিশন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দফতরকে রাজ্য সরকারের আওতা থেকে বের করে স্বতন্ত্র করার প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠায়—যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।