ডিজিটাল ডেস্ক, ১ মে: পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের আবেদন গ্রহণ করল না সুপ্রিম কোর্ট। ২২ এপ্রিলের মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার পর ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কাশ্মীরের তিন নাগরিক। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, বর্তমানে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করলে তা নিরাপত্তাবাহিনীর মনোবলে ধাক্কা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সেনার মনোবল নষ্ট করা সমীচীন নয় বলেই মন্তব্য করে আদালত।
বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এনকে সিংহের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন গোটা দেশ একজোট হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাহিনীর মনোবলে কোনওরকম আঘাত হানবেন না। বিষয়টির সংবেদনশীলতা বুঝে তাতে দৃষ্টিপাত করুন।”
প্রসঙ্গত পহেলগাঁও হামলার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়, কিন্তু এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ২৬ জন নিরীহ মানুষের হত্যাকারী জঙ্গিরা। কাশ্মীরজুড়ে একাধিক অভিযান ও তল্লাশি অভিযান চালানো হলেও মূল অভিযুক্তদের এখনও পর্যন্ত ধরা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। কীভাবে এই হামলার পাল্টা দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে।
মামলাকারীর তরফে পহেলগাঁও জঙ্গিহানলার তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারীর আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এনকে সিংহের বেঞ্চ মন্তব্য করেন, “দয়া করে দায়িত্বশীল হোন। আপনি কি চাইছেন এই সময় বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে?” তাঁরা আরও প্রশ্ন তোলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা কবে থেকে তদন্তে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন? আমরা কবে থেকে এই ক্ষমতা পেয়েছি? আদালতের কাজ বিরোধ মেটানো, তদন্ত চালানো নয়।” বিচারপতিদের এই কঠোর অবস্থানের মুখে পড়ে শেষমেশ মামলাকারীর আইনজীবী আদালতকে জানান, তিনি তদন্তের আবেদন জানিয়ে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেবেন।
কাশ্মীরের তিন বাসিন্দা— ফতেহ কুমার সাহু, মহম্মদ জুনেইদ এবং ভিকি কুমার— পহেলগাঁও হামলার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, অবসরপ্রাপ্ত এক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে ওই তদন্ত পরিচালিত হোক। একই সঙ্গে কেন্দ্র, জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন, সিআরপিএফ এবং এনআইএ-কে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার আবেদনও করেন তাঁরা। তবে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা গ্রহণ করেনি।
আবেদনকারীদের তিরস্কার করে বিচারপতির মন্তব্য, এমন সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে মামলা দায়েরের আগে পরিস্থিতির গুরুত্ব যথাযথভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল। তিনি স্পষ্ট জানান, সুপ্রিম কোর্ট নিজে তদন্তের কাজ করে না, ফলে আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও তদন্ত পরিচালনার উপযুক্ত ব্যক্তি নন। তাই এই প্রসঙ্গে আদালত কোনও ধরনের নির্দেশ জারি করতে পারে না।
Comments are closed.