Suvendu On Mamata : মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদ সফরকে কটাক্ষ শুভেন্দুর

11

ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ মে: ওয়াকফ-সংক্রান্ত অশান্তির জেরে কয়েক সপ্তাহ আগেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু সম্পত্তি, প্রাণ হারান তিনজন। পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হওয়ার পর সোমবার জেলায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রশাসনিক পর্যালোচনার উদ্দেশ্যেই তাঁর এই সফর।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে কড়া সমালোচনা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর অভিযোগ, মমতা ‘পছন্দের’ কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেই মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন। এমনকি, স্থানীয় পুলিশকে আগেভাগেই বিশেষভাবে ব্রিফ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। শুভেন্দুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য না জানিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছেন (Suvendu On Mamata)।

মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তিকে বড়সড় চক্রান্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সফরে গিয়ে তিনি স্পষ্ট জানান, তিনি কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নন, কিন্তু দাঙ্গা ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত কড়া। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, “যারা দাঙ্গা ছড়ায়, তারা বাংলার শত্রু।” তিনি আরও জানান, মুর্শিদাবাদের ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, জেলায় মূলত দুটি ওয়ার্ডেই গন্ডগোল হয়েছিল—এই মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যে তথ্য দিচ্ছেন জনগণকে।

সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পাল্টা বক্তব্য দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, “হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে তাদের সমস্যার কথা প্রকাশ্যে না বলতে পারেন, তাই প্রশাসনের তরফে তাদের গ্রাম ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র নিজের অনুগত কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন এবং পুলিশকে আগে থেকেই কী বলতে হবে তা ব্রিফ করা ছিল। শুভেন্দু দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে অশান্তি হয়েছে—এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে অন্তত ১০টি জায়গায় হিংসা ছড়িয়েছে এবং ৯০০-এরও বেশি দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। আতঙ্কে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য—“আমাকে কেন দায়ী করা হবে”—এই মন্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী, তিনি নিজের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। তিনি দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, কিন্তু তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”

সোমবার মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, “মণিপুর, রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা—এইসব রাজ্যে যখন হিংসার ঘটনা ঘটে, তখন তো কেন্দ্রের কেউ আসে না। অথচ বাংলায় সামান্য কিছু হলেই একদিনের মধ্যে সব প্রতিনিধি হাজির হয়ে যায়। কেন এই দ্বিচারিতা?” এই পরিস্থিতিকে “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” বলেই আখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ধর্মের নাম করে কিছু বহিরাগত এলাকায় প্রবেশ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, যার ফলে এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ বাধে। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন, “যারা এই হিংসার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, বাংলার মানুষ তাদের বরদাস্ত করবে না। আইন অনুযায়ী কড়া শাস্তি পেতেই হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, কিছু সংগঠন পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তাঁর কটাক্ষ, “কেউ কেউ ধর্মের নামে নিজেদের বড় নেতা বলে মনে করে।” তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার কখনই হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় না। তবে কোনও সংগঠন যদি উসকানি দিয়ে বা ষড়যন্ত্র করে অশান্তি ঘটায়, তার দায় সরকার নেবে না—সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments are closed.